সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হল হজ্জ। ঈমান, নামায, যাকাত ও রোযার পরই হজ্জের অবস্থান। হজ্জ মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের উপরই হজ্জ পালন করা ফরয। যা সক্ষম ব্যক্তির জন্য জীবনে একবারই ফরয। হজ্জ অস্বীকারকারী সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। আল্লাহ তা’লা বলেন, “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর সন্তুষ্ঠির জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।” (আলে ইমরানঃ ৯৭)
হজ্জ পালন উত্তম ইবাদাত : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আরয করা হলে তিনি এরশাদ করেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হজ্জ)। (বুখারী, হা-১৫১৯)
হজ্জ অতীতের পাপসমূহ মোছন করে দেয় : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ ‘ইসলাম গ্রহণ পূর্বেকৃত সকল পাপকে মুছে দেয়। হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ মুছে দেয় ও হজ্জ তার পূর্বের সকল পাপ মুছে দেয়। (মুসলিম: হা-১৭৩)
তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।” (বুখারি: হা- ১৬৫০)
তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘তোমরা পর পর হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের সাওয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (নাসায়ী: ২/৫৫৮)
তিনি আরও এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (তিরমিযী:৮১১)
তিনি আরও এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ থেকে ফিরে আসবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। (বুখারী: ১৫২১)
তিনি আরও এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্জ করে, হজ্জের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক: ৮৮১৭)
হজ্জ ও ওমরা পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জযাত্রী ও ওমরাযাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি বা মেহমান। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। (ইবনু মাজাহ, হা-২৮৯৩) তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা কওে দেন। (ইবনু মাজাহ, হা-২৮৯২)
হজ্জ ও ওমরাকারীর দুআ কবুল করা হয় : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হজ্জযাত্রীগণ ও ওমরাযাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর নিকট দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর নিকট মাফ চাইলে তিনি তাদের মাফ করে দেন। (ইবনু মাজাহ, হা-২৮৯২)
তিনি আরও এরশাদ করেনঃ আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জযাত্রী ও ওমরাযাত্রীগণ আল্লাহর মেহমান। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। (ইবনু মাজাহ, হা-২৮৯৩)
মাবরুর হজ্জের প্রতিদান হল জান্নাত : মাবরুর (মাকবুল) হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। যে অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থেকে হজ্জ আদায় করল, সে তার মাতৃ-গর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়ার দিনের মতো গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে ফিরে এল। (বুখারী, হা-১৪৩১)।
হাজীদের গুনাহ মাফ হয় এবং তারা যাদের গুনাহ ক্ষমা চায় তাদেরকে মাফ করা হয় : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা হাজীদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং হাজীরা যাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন, তাদেরকেও ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে বাযযার: ১১৫৫)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্জ ও উমরাকারীগণ যখন দুআ করে, তাদের দুআ কবুল করা হয়। তারা যখন কারো জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)
হজ্জ ও ওমরাহ হল নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ : উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহ তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের (নারীদের) জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল হজ্জে মাবরূর। (বুখারী: ১৫২০)
তিনি আরও বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জিহাদ হল হজ্জে মাবরূর। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম থেকে এ কথা শুনার পর হতে আমি হজ্জ ছাড়িনি। (বুখারী: ১৮৬১)
রাসূলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বৃদ্ধ, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হল হজ্জ ও ওমরা। (মুসনাদে আহমদ: ৯৪৫৯)
এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলেন, আমি ভীরু ও দুর্বল (জিহাদে যাওয়ার শক্তি-সামর্থ্য নেই)। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি অস্ত্র ও শত্রæর সাথে লড়াইবিহীন জিহাদ-হজ্জ পালন করো। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক:৮৮০৯)
হজ্জ ও উমরার জন্য খরচ করার বিনিময় সাতসতগুণ বৃদ্ধি পায় : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হজ্জের জন্য খরচ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার মতই, যার সওয়াব সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩০০০)
তিনি আরও এরশাদ করেন, তুমি তোমার পরিশ্রম ও খরচ অনুপাতে নেকি পাবে। (মুসতাদরাকে হাকিম: ১৭৭৬)
তিনি আরও এরশাদ করেন, কোন হজ্বকারী ব্যক্তি নিঃস্ব হয় না বা অভাব-অনটনে পতিত হয় না (মুসনাদে বাযযার :১০৮০)
তিনি আরও এরশাদ করেন, হজ্জে গমনকারী ব্যক্তির উট চলার পথে যখনই পা উঠায় এবং পা রাখে এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা ঐ হজ্জ কারীদের জন্য সওয়াব লিখে দেন। তার একটি করে গুনাহ মুছে দেন, তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
হজ্জ ও উমরা পালনকালে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত : ইবনে আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আরাফাতে অবস্থানরত ছিলেন। হঠাৎ তিনি বাহন থেকে নীচে পড়ে গেলেন। এতে তার ঘাড় মটকে গেল এবং তিনি মারা গেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বড়ইপাতা সিদ্ধকরা পানি দিয়ে গোসল দাও, তার ইহরামের দুই কাপড় দিয়ে তাকে কাফন পরাও। তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কেননা তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। (বুখারী: ১২৬৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হল, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কিয়ামত পর্যন্ত তার হজ্জের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে বের হল, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হল কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য উমরার সওয়াব লেখা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হল এবং তাতে তার মৃত্যু হল, কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য মুজাহিদের সওয়াব লেখা হবে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৬৩৫৭)
হজ্জের প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর বিদ্যমান : হজ্জ এমন একটি ইবাদাত যার প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর রয়েছে। তাওয়াফ, সাঈ, রমল, জিমার (পাথর নিক্ষেপ), মিনা, মুযদালিফাহ, আরাফাহসহ প্রত্যেকটি নির্দেশনায় আল্লাহর যিকর ধ্বণিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজ্জের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি তার চেয়েও অধিক স্মরণ কর। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। তাদের জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। (বাকারাহঃ২০০)
হজ্জের প্রতি উদাসীনতা মারাত্মক অপরাধ : আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল ফরয হজ্জ আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্জকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের উদাসীনতা বা অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান: ৯৭)
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্জ করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮)
তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করছে না। তারা তাদের উপর কর আরোপ করবে। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮)
যারা হজ্ব-ওমরা না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করে ইসলাম তা কখনো অনুমোদন করে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্জের ক্ষেত্রে কোনো বৈরাগ্য নেই। (আবু দাউদ, হা-১৭২৯) হযরত ইকরামা রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হল, সারুরা কী? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হজ্ব-উমরাহ কিছুই করে না অথবা যে ব্যক্তি কুরবানী করে না। (শরহু মুশকিলুল আছার ২/২১৫-১৬)
বিনা কারণে হজ্জ বিলম্ব করা গুনাহ : হজ্জ যেহেতু একবারই ফরয তাই যার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্জ আদায় করে, তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ্জ বিধানের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্জ ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ।
তাছাড়া যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তাই হজ্জ ফরয হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাআলার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে। এজন্যই হাদীস শরীফে হজ্জ ফরয হওয়া মাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। (মুসনাদে আহমদ: ১৮৩৩)
তিনি আরও এরশাদ করেন, ফরয হজ্জ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭)
উপরন্তু একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা যে স্বচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি সত্ত¡র হজ্জ আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্জের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। (ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
হজ্জ যাদের উপর ফরয : (১) মুসলিম হওয়া (২) বালিগ হওয়া (৩) স্বাধীন হওয়া (৪) বিবেকবান হওয়া (৫) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া, তথা যে ব্যক্তির এ পরিমাণ ধন-সম্পদ আছে যে, সে হজ্জের সফর (পথ খরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ ফরয। (৬) যাতায়াতে নিরাপত্তা (৭) মহিলাদের সাথে মুহরিম থাকা।
হজ্জ একবারই ফরয : হজ্জ প্রত্যেক মুসলমানের উপর সারা জীবনে একবারই ফরয। একবার ফরয হজ্জ আদায়ের পর পরবর্তী হজ্জগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।
যারা হজ্জের সফরের সৌভাগ্য লাভ করেন তারা আল্লাহর মেহমান। তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও মুহববতের অনুভূতি নিয়ে বায়তুল্লাহ ও অন্যান্য শেআর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। দ্বন্দ-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে সর্বাত্মকভাবে দূরে থাকা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুক, আমীন।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় খতীব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ