করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে চলা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে চট্টগ্রাম মহানগরে পুলিশের পাশাপাশি টহলে ছিল সেনাবাহিনী ও বিজিবি। তবে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে তাদের তৎপরতা দেখা গেলেও অলি-গলির চিত্র ছিল স্বাভাবিক। দোকানপাট খোলা রাখার পাশাপাশি ছোট পরিবহন ও জনসমাগম আগের মতই লক্ষ্য করা গেছে। কারও মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বা করোনা সংক্রমণের ভীতি ছিল না। অনেকে আবার ‘লকডাউন’ কেমন চলছে, তা দেখতে রাস্তায় বের হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে অলি-গলির মধ্যে তেমন একটা তৎপরতা ছিল না। তাই অলি-গলি ছিল অন্যান্য দিনের মত সরগরম।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীতে প্রবেশের ২০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কে চলাচলকারী প্রাইভেট যানবাহন ও রিকশায় তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এসময় সড়কে চলাচলকারী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশার যাত্রীদের অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে।
এদিকে নির্দেশনা অমান্য করায় ২৪টি ছোট পরিবহন জব্দ করার পাশাপাশি ৮৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের ৫০টি এবং জেলা প্রশাসনের ৩৭টি।
বাকলিয়া ইসহাকের পুল এলাকার বাসিন্দা মো. আসিফ বলেন, লকডাউনে ঘরে বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে। তাই আশপাশের পরিবেশ দেখতে একটু বের হয়েছি। সারাক্ষণ বাসায় থাকলে তো দম বন্ধ হয়ে আসে। তবে পুলিশ বা সেনাবাহিনী যদি আসে তবে আবার বাসায় ঢুকে পড়বো।
আবার কঠোর লকডাউন কেমন চলছে- তা দেখতে এসে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন ২১ জন। এসময় ৫টি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে আরো ১০টি গাড়ির বিরুদ্ধে। আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে অযথা ঘুরাঘুরির দায়ে পুলিশ এই ২১ জনকে আটক ও গাড়ি জব্দ করে। এ সময় তারা লকডাউন কেমন চলছে তা দেখতে বের হয়েছেন বলে পুলিশকে জানান।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকদের আমরা গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা করছি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই একটি চেকপোস্ট ও ৫টি টহল টিমের মাধ্যমে আমরা লকডাউন কার্যকরের চেষ্টা করছি। অকারণে যারা বের হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩৭টি মামলা দায়ের করেন। একই সঙ্গে অযথা ঘোরাঘুরি করায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় ১৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান, যারা বিনাকারণে ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদের জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়াও নির্দেশনার বাইরে যারা দোকান খোলা রেখেছেন তাদেরও জরিমানার পাশাপাশি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক টিম সার্কিট হাউস থেকে একযোগে সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযান শুরু করেছেন। এতে অংশ নিচ্ছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, র্যাব ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক। নগরীর প্রধান দুই প্রবেশপথ সিটি গেট ও শাহ আমানত সেতু এলাকা ছাড়াও অক্সিজেন, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, মইজ্জারটেক ও বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। অন্যদিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট, সীতাকুÐের ফৌজদারহাট ও মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে বসানো হয়েছে আরও তিনটি বিশেষ চেকপোস্ট।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, সরকারের নির্দেশনার আলোকে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের নেতৃত্বে মহানগরীর ২০টি গুরুত্বপ‚র্ণ পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব চেকপোস্টে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় ২৪টি গাড়ি আটকসহ ৫০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃত গাড়ির মধ্যে ৩টি প্রাইভেটকার, ২টি মাইক্রোবাস, ৮টি সিএনজি, ১টি টমটম, ৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অন্যান্য ৫টি যানবাহন রয়েছে। সপ্তাহব্যাপী লকডাউনে এ অভিযান চলমান থাকবে।
এদিকে কঠোর লকডাউনে সব ধরনের যান্ত্রিক গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে যে সকল গার্মেন্টস কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে গাড়ির ব্যবস্থা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনা নেওয়া করবে। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান ও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করার আহŸান জানিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন।