স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব ড. শফিকুর রহমান

1

এম.কামরুল হাসান চৌধুরী

দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও চট্টগ্রামের আলোকিত পুরুষ এবং ফটিকছড়ি রত্ন গর্ব কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রথিতযশা শিক্ষক, প্রখ্যাত গবেষক ও বিজ্ঞানী, নিবেদিত শিক্ষানুরাগী সর্বোপরি অসাধারণ মেধা ও প্রতিভাবান একজন গুণী ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব ড. শফিকুর রহমান সাহেব গত ১৭ অক্টোবর২০২৫ সকালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বসবাসরত অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯০ বছরের অধিক। জন্মসূত্রে তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আজিমপুরের ঐতিহ্যবাহী মাস্টার বাড়ির সম্ভ্রান্ত বনেদি পরিবারের মরহুম মুন্সি আবদুর রশীদের নাতি ও মরহুম ডাক্তার আজিজুর রহমান সাহেবের জ্যেষ্ঠ্য পুত্র এবং মাস্টার বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে এলাকায় সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি নিজ গ্রামের মধ্যে মাস্টার বাড়ির প্রথম পিএইচডি ডিগ্রিধারি ব্যক্তিত্বও বটে। তিনি পাকিস্তান আমলে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশের টানে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তিনি দেশকে ভাল বেসেছেন অকৃত্রিম ভাবে। তাই তাঁর পদার্পণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেধা, প্রতিভা ও কর্ম দক্ষতার সাফল্যের মাঝে দেশের জন্য তিনি অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। আপাদমস্তকে তিনি সম্পূর্ণ একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই দেশের জন্য তাঁর রেখে যাওয়া সুমহান অবদান সমূহ উল্লেখযোগ্য ভাবে আলোচিত কিংবা মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি তাঁর নানা গবেষণা কাজে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কোন সহযোগিতা মেলেনি! তাই তিনি দেশে চাকরি জীবন শেষ করে অবসরকালীন সময়ে নীরবে নিবৃত্তে সুদূর আমেরিকাতে পাড়ি দিয়েছেন।
ড. শফিকুর রহমান বাংলাদেশে বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবনে বাংলাদেশের কেমিক্যাল অ্যাবস্ট্রাক্টস সার্ভিস (ঈঅঝ)’র (প্রাক্তন) সভাপতি এবং খ্যাতনামা রসায়নবিদ ও গবেষক ছিলেন তিনি । এতে তিনি পেশাগত দক্ষতার সাফল্যের মাঝে দেশে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এছাড়াও তিনি একাধারে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), আরমান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিল এর মহাব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের সুপ্রাচীনতম সুপ্রসিদ্ধ জেম কালির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর প্রাক্তন সচিব ছিলেন। উল্লেখ্য যে, তিনি সিইউএফএলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং কর্ণফুলী কাগজ মিলে কয়েক ধরনের কাগজ উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত জীবনে শুরুতে তিনি সিলেট এম.সি. কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ছিলেন। তিনি নিজ এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি আজিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ড. শফিকুর রহমান বাংলাদেশে পেশাগত জীবনের অবসর গ্রহণ করার পর কর্ম দক্ষতার সাফল্যের খ্যাতিতে দেশের গন্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গমন করেন। সেখানে তিনি লবনের উপর গবেষণা করে সাফল্য অর্জন করেন এবং সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। তাই তাঁর ইন্তেকালে পর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শেষ দাফন কাফন অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের সহধর্মিণী ফরিদা রহমান চট্টগ্রাম গুলজার বেগম স্কুল এবং আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর দুই সন্তানও বর্তমানে আমেরিকাতে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছেন। উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও নিবেদিত শিক্ষানুরাগী এবং স্থানীয় আজিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বার-বার নির্বাচিত (একাধিকবার) অবিসংবাদিত সভাপতি মরহুম আলহাজ্ব মুজিবুর রহমানের বড় ভাই ছিলেন আলহাজ্ব ড. শফিকুর রহমান সাহেব।
স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং গুণীজন সমাদৃত আলোকিত পুরুষ আলহাজ্ব ডক্টর শফিকুর রহমানের ইন্তেকালে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি। প্রখ্যাত এই গুণীজনকে হারানোর শুন্যতা জাতির কাছে কখনও সহজে পূরণ হওয়ার নয়। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ পাক মরহুম কে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন এবং রেখে যাওয়া পরিবারবর্গকে ধৈর্য্য সহকারে সুস্থ ও নিরাপদ দীর্ঘ জীবন দান করুন। আমীন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী