স্বেচ্ছাসেবার চেতনাকে ধারন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই

2

লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

কেউ পরিবেশ নিয়ে, কেউ রক্ত নিয়ে, কেউ মানবতার জন্য, কেউ শিক্ষার জন্য, কেউবা চিকিৎসা সেবায় স্বেচ্ছায় রক্ত, শ্রম, সময়, অর্থ এবং সচেতনতা করে যায়। একটি মাত্র উদ্দেশ্যে সুন্দর সমাজ ও দেশ এবং সুস্থ জাতি গঠন। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবকদের অমূল্য অবদানের স্বারক-স্বরূপ। এই দিনটি স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিনিয়ত নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টাকে এবং একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গঠনে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি রাখে। ‘স্বেচ্ছাসেবা-সবার সম্মিলিত শক্তি’ আসুন আমরা স্বেচ্ছাসেবার চেতনাকে ধারন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব অবস্থানে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমাদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র স্বেচ্ছাসেবা সামষ্টিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশাবাদী। স্বেচ্ছাসেবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর পক্ষে বিশ্ব স¤প্রদায়, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), জাতিসংঘের সংস্থা, সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে তাদের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা, তাদের কাজের প্রচার করা, তাদের মূল্যবোধ ভাগ করে নেওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয় এর মাধ্যমে।
প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। যে কোনো দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে স্বেচ্ছাসেবকদের সচেতন ও দক্ষ করে তোলার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়। জীবনের সর্বত্র স্বেচ্ছাসেবীদের অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং ঘরে ও বাইরে স্বেচ্ছাসেবায় অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উপলক্ষে সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
স্বেচ্ছায়-স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এটি সমাজের সব বয়সী মানুষের, সকলস্তরের মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব। বিশেষ করে যুবকদের ওপর এই দায়িত্বটি বেশি। দেশের জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ যুবক। এদেরকে শক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমে প্রত্যেককে একেকজন সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি দেশের প্রয়োজনে যুবকরা সংগঠিত হয়ে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবক মনোবৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ করা এখন সারা বিশ্বেই অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই লক্ষে গঠিত হয়েছে জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি ইউএনভি। এটি জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের একশ’ ৩০টি দেশে তারা সক্রিয় রয়েছে এবং ৮৬টি দেশে তাদের ফিল্ড ইউনিট রয়েছে। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি এর দপ্তরের সাহায্যে তাদের কার্যক্রম প্রচার করে। প্রকৃত অর্থে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই স্বেচ্ছাসেবক। ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজের শ্রম, অর্থ, সময় ব্যয় করার মনমানসিকতা পোষণ করা উচিত প্রতিটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরই। আর মানবজাতির মধ্যে এই ধরনের গুণাবলী যাদের আছে তারাই প্রিয় মানুষের কাছে যেমন, সৃষ্টিকর্তার কাছেও তেমনি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে প্রকৃত নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মেকি লোক দেখানো পরোপকারীরা সমাজের উন্নতি নয়, বরং সমাজের শান্তি বিঘিœত করছে, অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে প্রত্যাশা হচ্ছে, সবার মেধা শ্রম নিয়োজিত হোক শতভাগ মানব কল্যাণে।

লেখক: সভাপতি, ক্লিন বাংলাদেশ