পূর্বদেশ ডেস্ক
রোবট এখন আর শুধু কল্পবিজ্ঞানের উপাদান নয়। আধুনিক যুগে ওষুধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে রোবট। ডাক্তারদের নির্ভুলতার সঙ্গে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে এবং অস্ত্রোপচার করতে সহায়তা করছে এরা। স্বাস্থ্যসেবাকে বদলে দিয়েছে মেডিকেল রোবোটিক্সের সা¤প্রতিক বিভিন্ন অগ্রগতি। বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিকে উন্নত করার মাধ্যমে রোগীর সেরে ওঠাকে আরও নিরাপদ ও কার্যকর করেছে এসব রোবট। খবর বিডিনিউজের।
মেডিসিনে রোবোটিক্সের সবচেয়ে সুপরিচিত বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে একটি হচ্ছে, অস্ত্রোপচারে সহায়তা করা। সার্জনদের বিস্ময়করভাবে নির্ভুলতার সঙ্গে অপারেশন করতে সাহায্য করে ‘ভিঞ্চি সার্জিকাল সিস্টেমে’র মতো বিভিন্ন ‘রোবোটিক সার্জিকাল সিস্টেম’।
ছোট আকারের টুল ও ক্যামেরা দিয়ে সাজানো এসব রোবট, যা দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ডাক্তাররা। অপারেশনের সময় দেহের কোনো অংশ কাটার আকার কমিয়ে দেয় এ প্রযুক্তিটি। ফলে এতে ব্যথা কম হওয়া, দ্রæত সময়ে সেরে ওঠা ও রোগীদের জন্য সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে আসে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোলজি, গাইনোকোলজি ও কার্ডিওলজির মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোবোটের সাহায্যে করা বিভিন্ন অপারেশন বিশেষভাবে কার্যকর।
অপারেশন পরবর্তী সময়ে সেরে ওঠায় সহায়তার জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে রোবট। আঘাত, অস্ত্রোপাচার বা স্ট্রোকের মতো স্নায়বিক পরিস্থিতি থেকে সেরে উঠতে রোগীদের সহায়তা করে এসব রোবট। এ ধরনের রোবটের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ডিভাইস রোগীর চলাচল বা গতিবিধিকে গাইড করতে, তাদের সেরে ওঠার বিষয়টি ট্র্যাক করতে, রোগীদের দেহের শক্তি ও গতিশীলতা ফিরে পেতেও সহায়তা করে।
রোগ নির্ণয় পরীক্ষার গতি বাড়িয়ে দিতে পারে ডায়াগনস্টিকে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোবট। ডাক্তারদের চেয়ে অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে ল্যাবরেটরিতে থাকা এসব রোবট, বিশেষ করে রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ বা জেনেটিক পরীক্ষার মতো নানা কাজের বেলায়।
কিছু রোবটে আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি রয়েছে, যা রোগীদের বেলায় মানুষের নজর এড়িয়ে যেতে পারে এমন বিভিন্ন চিহ্ন শনাক্ত করতে পারে। যেমন, এআইচালিত বিভিন্ন রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যান্সারের মতো রোগের প্রাথমিক বিভিন্ন লক্ষণ শনাক্তে।
বয়স্ক ব্যক্তিদের যতেœও মেডিক্যাল রোবট জোয়ার তুলছে। বয়স্কদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতে, সহচরী হতে ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি হয়েছে এসব রোবট। রোগীদের ওষুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয় এরা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, এমনকি জরুরি পরিষেবায় সতর্ক করতেও সহায়তা করে এরা।
গবেষণায় উঠে এসেছে, একাকীত্বের অনুভ‚তি কমাতে ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে পারে এ ধরনের রোবট।
আরেকটি যুগান্তকারী অগ্রগতি হচ্ছে, মাইক্রো-রোবটের বিকাশ, যা মানবদেহের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এসব ছোট আকারের রোবট প্রায়শই চালের দানার চেয়েও ছোট, যা সরাসরি দেহের চিহ্নিত অঞ্চলে ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে, আর এভাবেই এদেরকে বানানো হয়েছে।
মাইক্রো-রোবট রক্ত জমাট বাধা অপসারণ, ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন টিস্যু সারিয়ে তুলতে পারে। আর এমন অবস্থা চিকিৎসার নতুন পথ খুলে দেবে, যা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে ঠেকানো কঠিন।