স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ প্রবর্তিত রামকৃষ্ণ অনুশাসন তথা ভাবধারায় অনুপ্রাণিত সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের পাথুরিয়াঘাটা শাখার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ও পরে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রামকৃষ্ণ মিশন, নরেন্দ্রপুরের রূপকার হন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ভারতীয় দর্শন ও রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্যের একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি যথেষ্ট নৈতিক ও বৌদ্ধিকগুণে গুণান্বিত হয়েও মঠ ও মিশনের পদাধিকারী হননি। রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান পোপের কাছে প্রতিনিধিদলের সদস্যও হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামগঠন, বস্তি উন্নয়ন এবং যুবশক্তির বিকাশের ক্ষেত্রেও তার অবদান অনস্বীকার্য।
স্বামী লোকেশ্বরানন্দর জন্ম ১৯০৯ সালে ১৯ এপ্রিল বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার কেঁড়াগাছিতে তার মাতুলালয়ে। পিতৃপুরুষের বাসস্থান ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বারুইপাড়ায়। পিতা বসন্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা শিখরবাসিনী। পূর্বাশ্রমের নাম ছিল শিবপদ, ডাকনাম কানাই। তার নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা তালা-মাগুরার বি.দে ইনস্টিটিউশনে। রংপুর থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে আই.এ পড়া ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়ে নতুন নতুন ছেলেদের রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। একসময় পুলিশের হাতে মারও খেয়েছেন। তবে স্বদেশী আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা দেখে এক বছর পর তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি তার মা এবং গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র সান্যালের প্রেরণায় রামকৃষ্ণ সংঘের সন্ন্যাসজীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন। দ্বিতীয় বার পড়াশোনা শুরু করে পরীক্ষার আগে তিনি অদ্বৈত আশ্রমে থাকতেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাশ করেন। রামকৃষ্ণ মিশনের দেওঘর স্কুলে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মঠে যোগ দেন।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষের পরই রামকৃষ্ণ মিশনের পাথুরিয়াঘাটা শাখা কেন্দ্রে হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে লোকেশ্বরানন্দ পাথুরিয়াঘাটার ছাত্রাবাসের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। এখানে থাকতে তিনি রামবাগান বস্তিতে দরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনের জন্য যে কাজ শুরু করেন তা’ স্মরণীয়। পরিত্যক্ত, অনাথ এবং আর্থিকভাবে নিঃস্বদের একমাত্র বাড়ি তথা আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এটির জন্য কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে ‘উখিলা-পাইকপাড়া’ গ্রামটিকে ‘নরেন্দ্রপুর’-এ রূপান্তরিত করে শিলান্যাসের দিন থেকে নরেন্দ্রপুর আশ্রম গড়ে তোলার দায়িত্ব অর্পিত হয় এবং তার হাতেই ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ হতে শুরু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার দক্ষ প্রশাসনে ও যতœশীল শিক্ষকতার জন্যই দেশে শুধু বিশাল আকারে নয়, গুণমানে প্রকৃতই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি একসাথে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুর এবং রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক কলেজ, নরেন্দ্রপুরের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নরেন্দ্রপুর আশ্রমে ছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারের অধ্যক্ষ থাকাকালীন ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর স্বামী লোকেশ্বরানন্দজীর জীবনাবসান হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া