নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শাহনাজ কামরুন নাহারের (২৫) মরদেহ রেখে পালিয়ে যাওয়া স্বামীসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পাঁচলাইশ থানায় আত্মহননকারী ওই গৃহবধূর বড় ভাই শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ রেখে পালিয়ে যাওয়া ওই গৃহবধূর স্বামী মো. আল ফায়াদ চৌধুরীর (২৭) বাড়ি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায়। নগরীর কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কে কাইয়ুম রেসিডেন্সের চতুর্থ তলায় তারা থাকেন। মামলায় অপরাপর অভিযুক্তরা হলেন, গৃহবধূ শাহনাজের শাশুড়ি চেমন আরা রফিক (৬৪), শাহনাজের স্বামীর বড় বোন তাসলিমা আফরোজ (৪৪) ও তার স্বামী মো. লোকমান (৪২), শাহনাজের স্বামীর মেজো বোন খাদিজা আফরোজ (৩৭), স্বামীর সেজো বোন তাহমিনা আফরোজ (৩২) এবং স্বামীর ছোট বোন নাজিফা সালসাবেন (৩০)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার বোনের সঙ্গে আল ফায়াদ চৌধুরীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুক দাবি করতেন। ভুক্তভোগী শাহনাজ নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় অনাগত সন্তান ও নিজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি সব নির্যাতন সহ্য করে সংসার করছিলেন। ধীরে ধীরে তার ওপর নির্যাতনের চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ১৬ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে শাহনাজের শাশুড়ি ফোন করে বাদীর স্ত্রীকে জানান, তার বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। বাদীর বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকা থেকে বিবাদীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ রিসিভ করেননি। বাদী তার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারেন তার বোনকে চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই হাসপাতালে তাকে ভর্তি না করায় পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীর বোনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ‘লিগ্যাচার মার্ক অ্যারাউন্ড নেক’। এরপর তার বোনের মরদেহ সেখানে ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বিবাদীরা। বাদীর ধারণা, বিবাদীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্ররোচণার কারণে তার বোন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মামলার বিষয়টি তদারকি করছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ওই গৃহবধূ নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। মূলত আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগেই মামলাটি করেছেন তার ভাই। আমরা ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।