স্বামীর দু’বার যাবজ্জীবন স্ত্রীর ১৪ বছরের কারাদন্ড

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির মামলায় অভিযুক্ত এক দম্পতিকে পৃথক মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। দন্ডিতরা হলেন সাখাওয়াত হোসেন (৩০) ও তার স্ত্রী কমলা বেগম (২৭)। এর মধ্যে সাখ্ওয়াতের দু’বার যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে মোট ৬০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড আর কমলাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন জানান, মামলার রায়ে শিশু অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় এবং মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে একই আইনের ৮ ধারায় সাখাওয়াতকে মোট দু’বার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। প্রত্যেক অপরাধের জন্য যাবজ্জীবনের পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা করে অর্থদন্ড এবং আরও দুই বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। উভয় সাজা একইসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। অপহৃত শিশু হেফাজতে রাখার দায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ (৩০) ধারায় সাখাওয়াতের স্ত্রীকে মোট ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় সাখাওয়াতের মা ও ভাইসহ অপর তিনজনকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদেরকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, দন্ডিত দম্পতি সাখাওয়াত হোসেন ও তার স্ত্রী কমলা বেগম কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে তারা নগরীর পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা এলাকায় বসবাস করতেন। আর অপহরণের শিকার শিশুটিও একই এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত। তাদের বাড়িও কুমিল্লা জেলায়। তার বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, সাখাওয়াত হোসেন নগরীর সিইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি ও তার স্ত্রী অপহরণের শিকার শিশুটির বাসায় সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। ঠিকমতো ভাড়া দিতে না পারায় ঘটনার বছরখানেক আগে সাখাওয়াত দম্পতি বাসা ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালের ১৩ জুন সন্ধ্যায় রমজান মাসে ইফতারের দাওয়াতে সাখাওয়াত শিশুর বাসায় যান। ইফতার শেষে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততার ফাঁকে শিশুটিকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে সাখাওয়াত তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পালিয়ে যান। এরপর তার বাবাকে ফোন করে দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ ঘটনায় পরদিন শিশুটির বাবা পতেঙ্গা থানায় সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনার দুদিন পর ১৫ জুন পুলিশ সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়ে সাখাওয়াতের স্ত্রীর হেফাজত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় সাখাওয়াতের স্ত্রী, মা ও ভাই এবং অপর এক ব্যক্তিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক সাখাওয়াতকে ১৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পতেঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই মামুনুর রশীদ। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে মোট ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন।