রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করছে। খুলেছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসছে হাটবাজার। শহরে সহিংসতাবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে জেলা বিএনপি। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে ইতোমধ্যে সহিংসতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সেনা রিজিওন কমান্ডারসহ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যারা সহিংসতা ও সংঘাতের সাথে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আর হতে দেওয়া হবে না।
এছাড়া রবিবার গুজব নিয়ন্ত্রণ ও শহরে শান্তি ফেরাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সব স¤প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় গুজব প্রচারকারীকে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়। এ সময় স্থানীয়রা বলেন, বহিরাগতরা এ হামলায় অংশ নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালি সবাই।
রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে রাঙামাটির কোতোয়ালী থানায় মামলাটি করেছেন নিহত কলেজছাত্র অনিক কুমার চাকমার বাবা আদর সেন চাকমা। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে অনিককে পেটানোর একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কয়েকজনের চেহারা দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ি ও বাঙালিদের দুই পক্ষে সংঘর্ষের সময় গত শুক্রবার সদরের কালিন্দীপুর এলাকায় অনিক চাকমাকে মারধর করা হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ মো. ইমরান গত রবিবার বিকেলে বলেন, একটি মামলা হয়েছে। নিহত কলেজছাত্রের বাবা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় এখনো গ্রেপ্তার নেই। শাহ মো. ইমরান আরও বলেন, রাঙামাটিতে শুক্রবারের সহিংসতা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। সহিংসতার পর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে এ দুই জেলায় প্রাণ হারান চারজন। ঘটনার ‘প্রতিবাদে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে রাঙামাটি শহরে বের করা পাহাড়িদের একটি মিছিল থেকে ঢিল ছোঁড়াকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবনসহ ১৫/১৬টি স্থাপনা ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুন ধরিয়ে পোড়ানো হয় তিন সাংবাদিকের মোটরসাইকেলসহ ২০-২২টি যানবাহন। হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে শহরের কাঁঠালতলীর বৌদ্ধমন্দির মৈত্রী বিহারে। সংঘর্ষে একজন নিহত ও ৬৪ জন আহত হন বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা।