স্বাদহীন পান্তায় হারাচ্ছে চিরচেনা উৎসবের রং এম এ হোসাইন

1

পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ, হাসিমুখ আর সংস্কৃতির রঙিন উৎসব। কিন্তু এবারের চট্টগ্রামে বৈশাখ এসেছে এক ভিন্ন রূপে। ইলিশ নেই, নেই সেই চিরচেনা উৎসবের স্বাদও। বাজারে গিয়েও মানুষ ফিরে আসছে খালি হাতে, রূপালি শূন্যতা যেন ছায়ার মতো ছড়িয়ে আছে পুরো শহরজুড়ে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বছরের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশ যেন বাঙালির ঐতিহ্যের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। তবে এবারের বৈশাখে সেই ইলিশ নিয়েই নেই আগের মতো মাতামাতি। সংকট, নিষেধাজ্ঞা ও চড়া দামের কারণে ইলিশ এখন সাধারণের নাগালের বাইরে। বাজারে গিয়েও ইলিশ না পেয়ে অনেকেই ফিরছেন হতাশ হয়ে।
নগরের কাজির দেউড়ি, আগ্রাবাদ, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকারের কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও বড় ইলিশ নেই বললেই চলে। যা আছে, তার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে, মাঝারি আকারের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় সাইজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
মাছ বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, এবার পহেলা বৈশাখে ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি। আগে বৈশাখের দুই-তিন দিন আগে থেকেই ইলিশের চাহিদা বেড়ে যেত, এবার মানুষ দাম শুনেই চলে যাচ্ছে।আমরাও আগেভাগে ইলিশ তুলিনি, লোকসান হওয়ার ভয়ে।
মৎস্য আহরণকারীদের মতে, এই সংকটের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। গত বছর মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। আর চলতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিনের সামুদ্রিক মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এর ফলে সমুদ্রে ইলিশ আহরণে ব্যাঘাত ঘটছে। একইসাথে ঘূর্ণিঝড় ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে বহু জেলে জাল ফেলতেই পারেননি।
সীতাকুন্ডের জেলে বিমল দাশ বলেন, গত দুই মাসে মাত্র কয়েকবার সাগরে যেতে পেরেছি। তাও যে ইলিশ পাইছি তা তেমন বড় না। এবার খরচ উঠানোই মুশকিল হয়ে গেছে।
নতুন বছর বরণে ইলিশ-ভোজন বাঙালির অন্যতম রীতি হলেও বাস্তবতার কষাঘাতে এবার সে রীতি যেন শুধু স্মৃতির পাতায়। কেউ কেউ পান্তার সাথে তেলাপিয়া কিংবা পাঙ্গাশ দিয়েই উৎসব সেরে নিচ্ছেন।
স্মৃতি দাশ নামের এক ক্রেতা বলেন, ঘরে বাচ্চারা অপেক্ষায় ছিল ইলিশ খাবে বলে। বাজারে এসে দেখি দামে হাত পোড়ে। ছোট ছোট ইলিশ আছে, সেগুলোর দাম শুনে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা।
ইলিশের এই সংকট সাময়িক হলেও এর প্রভাব পড়ছে উৎসব-সংস্কৃতিতেও। উৎসবের দিনে ইলিশকে ঘিরে যে আবেগ কাজ করত, তা এবার যেন অনেকটাই ফিকে।
উল্লেখ্য, প্রজনন মওসুমে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ৬৫ দিন থেকে কমিয়ে ৫৮ দিন করেছে সরকার। স¤প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা, ২০২৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সব ধরনের মৎস্য নৌযান কর্তৃক যে কোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।