স্বাগত ২০২৫

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাকালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিল আরেকটি বছর। আজ ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০২৫ সালের প্রথম দিন। আনন্দ- বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসেব-নিকাশ পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই আগামী দিনের নতুন স্বপ্নে সোনালি প্রত্যাশার পাখা মেলে। বিদায় মানেই নতুন স্মৃতি। এর সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় যাপিত জীবনের সময়। পঞ্জিকার পাতা উল্টে চলে যায় দিন, মাস, বছর, যুগের পর যুগ। কালের পরিক্রমায় এভাবেই দিনপঞ্জির পাতা উল্টাতে উল্টাতে দোরগোড়ায় হাজির হয় নতুন বছর। গত বছরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তরুণরা গড়েছে নতুন বাংলাদেশ। তাইতো নতুনের আবাহনে এবারের বাংলাদেশ নিয়ে আশা প্রকাশে পেয়েছে ভিন্নতা। নতুন বছরে অন্তহীন আশা- বাংলাদেশ থাকবে শান্ত। সোনার বাংলায় স্পর্শ না হোক দুর্নীতি।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, ‘বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও, ক্ষমা করো আজিকার মতো, পুরাতন বর্ষের সাথে/পুরাতন অপরাধ যত।’ আমাদেরও প্রত্যাশা পুরনো বছরের যত ব্যর্থতা-বেদনা, হতাশা-নিরাশা এমনি করে ক্ষয় হোক আবর্ত আঘাতে।
কবি সুফিয়া কামাল লিখেছেন, অনন্ত সূর্যাস্ত-অন্তে আজিকার সূর্যাস্তের কালে/সুন্দর দক্ষিণ হস্তে পশ্চিমের দিকপ্রান্ত-ভালে/দক্ষিণা দানিয়া গেল, বিচিত্র রঙের তুলি তার/বুঝি আজি দিনশেষে নিঃশেষে সে করিয়া উজাড়/দানের আনন্দ গেল শেষ করি মহাসমারোহে। পুরনো বছরের ভুলগুলো শুধরে সমস্ত ইতিহাস থেকে ভালো ভালো শিক্ষা গ্রহণ এবং অতীতের সফলতা-ব্যর্থতাকে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সামনের দিকে দিপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ অর্থাৎ বাঙালি অন্যদের তুলনায় এই ভেবে অনায়াসে গর্ব করতে পারে যে, তাদের একটি নিজস্ব বর্ণমালা এবং একটি বর্ষপঞ্জি রয়েছে, যা বিশ্বের অনেক বিখ্যাত জাতিরও নেই। নিজস্ব বর্ষপঞ্জি থাকার কারণে বাঙালি বছরে দু’বার বর্ষবরণ করে, তার একটি পয়লা বৈশাখ। আরেকটা হলো ১লা জানুয়ারি। বাঙালি একবার বলে শুভ নববর্ষ। আরেকবার বলে হ্যাপি নিউ ইয়ার।
চিরসংগ্রামী, লড়াকু ও আশাবাদী মানুষের প্রত্যাশা সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল আনন্দ। এ দেশে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বস্তি, গতিময়তা। নতুন আশার আলো প্লাবিত করবে দিক-দিগন্ত। নতুনের প্রতি সবসময়ই মানুষের থাকে বিশেষ আগ্রহ ও উদ্দীপনা। নতুনের মধ্যে নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ন করার সুযোগ করে দিতে এলো নতুন বছর। মহাকালের অতলে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। সময়ের চক্রে আর কখনোই ফিরবে না ২০২৪ সাল। তবে বছরটির রেখে যাওয়া স্মৃতি-বিস্মৃতি আলোড়িত হবে প্রকৃতি-পরিবেশ-মনুষ্য সভ্যতায়। আবারও সবাইকে জানাই ইংরেজি নতুন বছরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। শুভ হোক ইংরেজি নববর্ষ।
খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ থেকে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সূচনা হয়েছে। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ১লা জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন বছর। মেসোপটেমিয় সভ্যতা (বর্তমান ইরাক) থেকে প্রথম নববর্ষ উদযাপনের সূচনা হয়। তবে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ অব্দে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন- ইসরায়েল। দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। তবে ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ, বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অ-ইহুদি উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধী। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকেই গ্রহণ করেনি। যেমন- সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। এসব দেশ ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
রীতি অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখে বাংলাদেশে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর দিন পেরিয়ে শুণ্য ঘণ্টা থেকে শুরু হয় উৎসব। রাতের এ উৎসবকে বলা হয় ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের তেমন প্রচলন নেই। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও এ উৎসব উদযাপন হলেও তা খুবই নগণ্য। কিন্তু বড় শহর ও মফস্বলে এ উৎসবের জনপ্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়। দিনটিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের সাথে বিনিময় চলে শুভেচ্ছাবার্তা। নববর্ষ মানেই সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া।