স্বস্তি ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

1

সংবাদপত্রে ব্যাপক লেখালেখির পর চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্তারা। সেই সাথে বহদ্দারহাটসহ বেশ কয়েকটি বাজারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও দেখবাল শুরু করলে ডিমসহ শাকসবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে কয়েকঘণ্টা। অভিযানের পর দিন শেষে আবারও যে লাউ সেই কদু। এরপর কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে তবে তা প্রত্যাশিত পর্যায়ে নয়। ফলে নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসায় ভোক্তাদের দুর্ভোগ কমেনি। গত সোমবার, জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপণ্যের বাজার দর বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের তফাৎ বিস্তর। ভোক্তার ১০ শতাংশ খরচ বৃদ্ধির বিপরীতে আয় বৃদ্ধির পেয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ভোক্তার আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ থেকে ২ শতাংশ। মূলত আয়ের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ায় ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর দীর্ঘসময় আয় বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকায় তা ভোক্তার জীবনযাত্রাকে নেতিবাচক ধারায় প্রভাবিত করেছে। রোববার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির গতিশীলতা, এপ্রিল-জুন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধবিগ্রহের ফলে বৈশ্বিক মন্দা বেড়ে চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এ মন্দার শুরু থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। সে তুলনায় আয় বৃদ্ধির হার বাড়েনি, বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। ফলে আয় ও ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যকার ব্যবধান বাড়ছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় আমদানিকেন্দ্রিক পণ্যগুলোর দাম বাড়ায় এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার কয়েকগুণ বেড়েছে, যা সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ডলারের দাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে আমদানি পণ্যের মূল ভূমিকা ছিল ২৮ শতাংশ। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে। আবার দেখা যাচ্ছে-চাল, পেঁয়াজ, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি, সয়াবিন তেল, আলু, ডিমসহ শাক-সবজির মতো বেশ কিছু ভোগ্য পণ্যের মুনাফার মার্জিন প্রান্তিক পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের প্রান্তিক, পাইকারি ও খুচরা মূল্যের মধ্যকার মুনাফার মার্জিন বেড়েছে। মার্জিন বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের মুনাফাও বেড়েছে। এর বিপরীতে ভোক্তার খরচ বেড়েছে। মুনাফার মার্জিন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সয়াবিন তেল ও সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে। এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমায় এর আমদানি খরচ কমলেও দেশীয় বাজারে দাম কমার বদলে তা বেড়েছে। ফলে পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের মুনাফার মার্জিনও গেছে বেড়ে। এর মানে হচ্ছে, মিল মালিকরা বেশি মুনাফা করছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও তারা পাইকারি সরবরাহে দাম কমাননি। ফলে খুচরা বাজারেও তা কমেনি।
অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফার প্রবণতা যে বিন্দুমাত্র কমেনি, এ প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। এ সমস্যাগুলো বিগত সরকারের আমলে সৃষ্টি হলেও তা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রধানত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো হলো-টাকার প্রবাহ হ্রাস, শুল্ক কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি ও বাজার তদারকি জোরদার। এছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত সরকারকে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়।
এজন্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে যাতে কোনো সংকট না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন খাতে অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় সব ধরনের বাধা দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কেউ যাতে বাজারে কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোথায় ও কীভাবে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে আইনি উদ্যোগ নিতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এছাড়া প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে অবাধ এলসি খুলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারে সেই ধরনের ব্যবস্থাপনা ও আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।