স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পিআরও বেতারে অবরুদ্ধ

3

বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপুকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি গত বছরের ৪ আগস্ট অপুর স্বাক্ষরিত চিঠিত কারফিউ জারি হয়েছিল। তাই তাকে আটক করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের বনানী কমপ্লেক্স সংলগ্ন বাংলাদেশ বেতার ভবনে নিজ কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাকে হেফাজতে নিয়েছেন। খবর সিভয়েসের
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ-আঞ্চলিক পরিচালককে আটকে রেখেছে বলে জানতে পেরেছি। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছি। যেহেতু উনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলাপ করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী সেখানে আছেন তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পদে আছে কি-না তা জানা নেই। ছাত্রদের দাবি, গত বছরের ৪ আগস্ট তার (অপু) স্বাক্ষরিত চিঠিতে নাকি কারফিউ জারি হয়েছিল।’
তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, ওই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে একটি মামলা রয়েছে। আমরা দুদকের সাথেও যোগাযোগ করেছি। তাদের তদন্ত চলমান রাখা অবস্থায় আটক দেখাবে কিনা তারা জানাবে। আপাতত তাকে আমরা হেফাজতে নিয়ে আসবো। এরপর ঊর্ধ্বতনদের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।’
মো. শরীফ মাহমুদ অপু কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ণমতি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে। তার বাবা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
শরীফ মাহমুদ অপু তেজগাঁও-হাতিরঝিল থেকে নির্বাচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রায় ১০ বছর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। অভিযোগ আছে, অবৈধ আয়ের অর্থে বাড়ি, গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট এমনকি ব্যাংককের পাতায়ায় রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন তিনি। রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা ও গুলশানে বেশ কয়েকটি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। আরও অভিযোগ আছে, পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই বদলির পাশাপাশি তিনি অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়েছেন। যার বিনিময়ে অপু নিজের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য নিয়েছেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে। এসব টাকার বড় একটি অংশ দিতে হতো কামালের ছেলে অথবা তার স্ত্রীর কাছে।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি শরীফ মাহমুদ অপুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শরীফ মাহমুদ অপু ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ, পদায়ন ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগে উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গত ১৫ আগস্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আগেই মামলা দায়ের করেছে দুদক। পরবর্তী পর্যায়ে অপুর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপ আঞ্চলিক পরিচালক মো. শরীফ মাহমুদ অপু মুঠোফোনে বলেন, ‘কিছু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোক আমার অফিসে এসেছে। তারা আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলছে। আমিতো সরকারি চাকরি করি, সিদ্ধান্ত সরকার দেবেই। তারা দাবি করছে, আমি কারফিউর ঘোষণা দিয়েছিলাম আন্দোলনের সময়ে।’
সরকারি দায়িত্ব পালন করেছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমিতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলাম না। আমি ছিলাম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। সেই হিসেবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আমি পালন করেছি। এখন যিনি মন্ত্রণালয়ে আছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা তিনিও পালন করছেন তার দায়িত্ব। আমি না থাকলে তখন আরেকজন থাকতো। এটা কেউ না কেউ দায়িত্ব পালন করবেই।’