নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরোদমে চলছে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। করোনায় কাজের গতি কিছুটা থমকে দাঁড়ালেও বর্তমানে স্বপ্নের দুয়ারে অগ্রগতির হাতছানি ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে প্রকল্পটির। বাকি কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। সম্ভাবনার এ দুয়ার খুললে প্রথম বছরেই ৫০ লাখ গাড়ি চলাচল করবে টানেলের মধ্যদিয়ে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, করোনায় কাজের গতি কিছুটা মন্থর হলেও বর্তমানে কাজ চলছে পুরোদমে। নির্ধারিত সময়েই আমরা এ টানেল চালু করতে পারব। এটি সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম মহানগরের পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলায় গড়ে তোলা যাবে আরও একটি নতুন শহর। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে প্রকল্পটির।
প্রসঙ্গত, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক, যা ২ শতাংশ সুদহারে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।
তথ্য মতে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
দুটি টিউবের এ টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। একটি টিউবের সড়ক দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী এবং অপর টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অভিমুখী যানবাহন চলাচল করবে। প্রতিটি টিউব চওড়া ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অপর টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের প্রস্থ ৭০০ মিটার।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে ৭২ শতাংশ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ হয়ে নদীর ওপারে আনোয়ারা পর্যন্ত একটি টিউব পরিপূর্ণভাবে স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় টিউব স্থাপনের কাজও প্রায় ৭১ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রথম টিউবের ভেতর ল্যান্ড স্লাবের কাজ চলছে, যার ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কর্ণফুলী টানেল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। কর্ণফুলী টানেল চালু হলে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রামের দুই অংশের মানুষের। বাড়বে জিডিপির পরিমাণ। ফলে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামও হয়ে উঠবে ওয়ান সিটি টু টাউন। স্বপ্ন পূরণের একেবারে কাছাকাছি দেশ।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে অগ্রগতির এ সোপান ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’।