দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যের শহর চট্টগ্রাম। বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক নগরী যাই বলা হোক, এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর এটি। দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। অভিবক্ত ভারতে প্রথম এ চট্টগ্রাম থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা হয়। বৃহত্তর বাংলার প্রথম দৈনিক পত্রিকার জন্মও এ চট্টগ্রাম থেকে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শুরু এ চট্টগ্রাম থেকে। সঙ্গত কারণে চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলার দুর্বলতাগুলো দেখলে চট্টগ্রামবাসীকে হতাশ করে। একসময় চট্টগ্রামে লালদিঘির মাঠ, শহীদ মিনার, ডিসি হিলে বিচ্ছিন্নভাবে দফায় দফায় বইমেলার আয়োজন হতো। এসব আয়োজনে রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠকরা সম্পৃক্ত থাকলেও বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও ঐক্যবদ্ধ বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দায়িত্ব নিয়ে শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হল প্রাঙ্গণে বইমেলা আয়োজন করে। পরের বছর চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনিসিয়াম মাঠে বড় পরিসরে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন হয়। এ বইমেলা পুরো চট্টগ্রাম নয় শুধু ঢাকায়ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ঢাকার বড় বড় প্রকাশনীগুলোও মেলায় অংশগ্রহণ করে বইমেলাকে সফল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীবছর কোভিড-১৯ এর কারণে স্বল্প পরিসরে বইমেলার আয়োজন হয়। ২০২১, ২২ ও ২৩ সালে একই ভেন্যুতে বইমেলার আয়োজন হলেও ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম তৎকালীন জেলা প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে জিমনিশিয়াম মাঠে মেলার আয়োজনে অনুমতি মিলেনি। ফলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সিআরবি মাঠে মেলার আয়োজন করে। ওই সময় স্থান পরিবর্তনসহ যোগাযোগ সমস্যার কারণে সৃজনশীল প্রকাশনাসহ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে চট্টগ্রামে একটি স্থায়ী বইমেলার ভেন্যু গড়ে তোলার দাবি জোরালো হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বাংলা একাডেমি নিজেরাই বইমেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু নির্ধারণ করেছে অনেক আগে থেকে। চট্টগ্রামে প্রাচীন নগর হিসেবে এখনও একটি বইমেলা এমনকি আন্তর্জাাতিক বাণিজ্য মেলারও একটি স্থায়ী ভেন্যু গড়ে না উঠা দুঃখজনক। জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম জিমনিশিয়াম মাঠে বইমেলার আয়োজনের কথা জানিয়েছেন। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুখবর। মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের কথা সম্প্রতি বেশ কয়টি স্কুল কলেজের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়। সৃজনশীর প্রকাশনা পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে তিনি চট্টগ্রামের বইমেলা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। আশ্বস্থ করেন, চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনিসিয়াম মাঠে এবং আরো বড় আকারে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি এ সময় বলেন, বই জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। তরুণ প্রজন্মকে মাদক মোবাইল আসক্তি, কিশোর গ্যাং কালচার থেকে দূরে রেখে নৈতিক চিন্তাসমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে এবারের চসিকের অমর একুশে বই মেলার কলেবর আরো বৃদ্ধি করা হবে। চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বইমেলায় সম্পৃক্ত করার কথাও জানান। সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদ থেকে মেলার সময়সূচি ১ ফেব্রæয়ারি থেকে শুরু করে ২৬ ফেব্রæয়ারি নির্ধারণ করার অনুরোধ জানান। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মেলার ভ্যেনু নির্ধারণে চিঠি দেয়া এবং প্রস্তাবিত সময়সূচি বিবেচনার আশ্বাস দেন। সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত আরো বলেন, অমর একুশে বইমেলা আমাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং মুক্তচিন্তার প্রতীক। এটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সর্বাত্মকভাবে এই মেলার সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করবে। প্রকাশকদের প্রস্তাবসমূহ আমরা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব। তিনি জানান, জিমনেসিয়াম মাঠে মেলা আয়োজন এবং সময়সূচি নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রæত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি এই মেলা চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ জাগাতে সহায়ক হবে বলে আশা করেন। তিনি বইমেলাকে সফল করতে এবং পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা নির্ধারণের জন্য কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করার কথা জানান। এসব কমিটি সঠিকভাবে কাজ করলেই বইমেলা সার্থকভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। বইমেলার সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সকলের সমন্বিত প্রয়াস। এখানে ব্যক্তিগত ইগো বা স্বার্থের স্থান নেই। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা একটি সফল, প্রাণবন্ত এবং স্মরণীয় বইমেলা উপহার দিতে পারব। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে। আমরা মেয়রের প্রত্যাশাকে দৃঢ়ভাবে লারন করি, তবে এও আশা করি, মেয়র ডা. শাহাদাত আগামিতে আন্তরিক হলে চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলার জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যু গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু নয়। অমর একুশে বইমেলার সকল প্রস্তুতি নিস্কণ্ঠকভাবে সুসম্পন্ন হোক -এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।