স্থানীয় ভোটার তালিকা ধরেই পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন

1

রাঙামাটি প্রতিনিধি

এখন যে ভোটার তালিকা রয়েছে সে ভোটার তালিকা ধরেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বললেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। জেলা পরিষদ আইনে যা আছে সেই আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৃথক কোন তালিকা না এবং অন্য কোন আইনেও নহে এবং অন্য কোন চুক্তির আলোকেও ওই তালিকা দিয়ে নির্বাচন নয়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী প্রতিনিধি দলের সাথে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের আইনে গঠিত হয়নি। জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে জেলা পরিষদের আইন নিয়ে।
এর আগে মতবিনিময় সভায় অংশ গ্রহণ করতে এসে স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে তোপের মূখে পড়েন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা। এতে কমিশনের সদস্যরা পিছু হটে সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যেতে চাইলে পরে জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ঘণ্টা ক্ষাণিক পরে উভয়ের মধ্যে সমঝোতায় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, এদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাঙামাটির বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভার আহবান করা হয়। সভায় যোগ দিতে গেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখ গেটে একদল শিক্ষার্থীর বাধার মুখে পড়েন কমিশনের সদস্যরা। এ সময় কমিশনের সদস্যদের প্রবেশে বাধা দিয়ে সভা বাতিল করার দাবি জানান প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা। এতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে।
প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ,ওই মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধীছাত্র আন্দোলনের কোনো প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে গুটিকয়েক রাজনৈতিক এবং এনজিও সংগঠনের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছিল। এ ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছে বৈষম্য বিরোধীছাত্র আন্দোলন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
পরেএ ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহর নেতৃত্বে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সভায় রাখার সিদ্ধান্ত হলে বিকাল ৪টার পরে মতবিনিময় সভাটি শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরও তা শেষ হয়নি। শুরুতে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা সভাকক্ষে প্রবেশ করলে পরে তাদেরকে সভাস্থল ত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, সদস্য আবদুর রহমান, ইলোরা দেওয়ান, ফেরদৌস আরেফিনা ওসমানসহ ৭সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এতে রাঙামাটির বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে কিভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায় সে ব্যাপারে সংস্কার করার কথা উল্লেখ করেন। একই আইনের ভিত্তিতে সকল নির্বাচন করার পরামর্শ দেন। কর্তৃত্ত¡বাদী রাজনীতি হতে বের হতে হবে। অতীতের রাজনীতিতে যেভাবে হয়েছে এমন ভাবে যেন না হয়। পূর্বের সকল কালচারাল পরিবর্তন-সংস্কার করতে হবে।
সংগ্রাম পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আনোয়ার আল হক বলেন, ১৯০০ সালের রেগুলেশন আইন অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে একটা সমঝোতা করে দিতে হবে। জেলা পরিষদ অবশ্যই নির্বাচন দিতে হবে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক ভাবে ভোটার তালিক তৈরি করা করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ মিলে মিশে কাজ করতে হবে সকল বাজেট জেলা পরিষদ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে হবে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিন রানা বলেন, সকল নিয়োগ ও সুযোগের বিষয়ে মেধার ভিত্তিতে হওয়া দরকার। জেলা পরিষদ আইন সংশোধনী-২০০২ করা দরকার। জেলা পরিষদের নির্বাচন অতিব জরুরি দরকার। উন্নয়ন বোর্ড যেন জনপ্রতিনিধিত্বমূলক উন্নয়নমূলক করা হয়। রাবিপ্রবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নুর আলম বলেন, স্থায়ী বাসিন্দা সনদের ক্ষেত্রে রাজার সর্টিফিকেট, ডিসির সার্টিফিকেট ব্যাপারে সমস্যার সমাধান হতে মুক্তি দরকার। জেলা পরিষদে নিয়েগের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির বিষয়টিকে বড় করে দেখা হয় এখানে চরম বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় এখন হতে মুক্তির সমাধান আশা করছি। যে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকরির জন্য কোন একটি গোষ্ঠীর দিকে না তাকিয়ে জনগোষ্ঠীর দিকে তাকিয়ে সকল ক্ষেত্রে নিয়োগ করা যেতে পারে।
রাঙামাটির বাঙালি ছাত্র পরিষদ সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এর আগের নিয়োগেও একক গোষ্ঠিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং শান্তিচুক্তিতে উপজাতি কথা উল্লেখ রয়েছে তবুও তারা আদিবাসী পরিচয় প্রদান করে। তখন প্রতি উত্তরে জেএসএস নেতা গৌতম দেওয়ান বলেন, আমার পরিচয় আমি দিব তাতে আপনাদের সমস্যা কি? বলে,কিছুক্ষণ পরেই সভা হল ত্যাগ করেন এবং তার সাথে এ্যাডঃ সুসমিতা চাকমা,এ্যাডোকেট জুয়েল দেওয়ান ও সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান , রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান, সুজন জেলা সভাপতি ও আইনজীবী এডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।