স্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে : সিটি মেয়র

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, স্ট্রোক এখন বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ। প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। অথচ এর বেশিরভাগ ঝুঁকি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিলে স্ট্রোক থেকে বাঁচা সম্ভব।গতকাল সোমবার বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। স্ট্রোক প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও দ্রæত চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) নিউরোসার্জারি বিভাগ আয়োজন করেছে দুই দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা অনেক সময় স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে অবহেলা করি। যেমন হঠাৎ কথা জড়ানো, শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া বা দৃষ্টিতে ঝাপসা দেখা। এই মুহূর্তগুলোই আসলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। দ্রæত হাসপাতালে নিতে পারলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ ও রিহ্যাবিলিটেশন বিষয়ে চমেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য ‘ স্ট্রোক-মুক্ত চট্টগ্রাম’।
চমেক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। যার অর্ধেকেরও বেশি সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন বা স্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও স্থ‚লতা এখনো প্রধান ঝুঁকির কারণ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন স্ট্রোক চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার জরুরি সেবা চালু করেছে। আমরা চাই, মানুষ দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিক এটাই এই দিবসের মূল বার্তা।
নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. সাইফুল আলম বলেন, স্ট্রোকের ৮০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, ধূমপান বন্ধ করা, লবণ ও তেল কম খাওয়া, এবং দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা। এই ছোট পরিবর্তনগুলোই জীবন বাঁচাতে পারে।
ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, স্ট্রোক প্রতিরোধ মানেই জীবন বাঁচানো। আজকের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো, সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে স্ট্রোক হঠাৎ ঘটে, কিন্তু এর ঝুঁকি প্রতিদিন তৈরি হয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এসবের প্রতি সচেতন না থাকলে যেকোনো মুহূর্তে স্ট্রোক হতে পারে। নিউরোসার্জারি বিভাগ শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধমূলক কাজেও ভ‚মিকা রাখতে চায়।
এর আগে সকাল ৯ টায় চমেক ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া সাইকেল র‌্যালিটি হাসপাতালের মূল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাইকেল ফেস্ট, ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন ক্রীড়ার আয়োজন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল আলম। সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তাসলিম উদ্দিন ও উপাধক্ষ্য অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সানাউল্লাহ শামীম, সহযোগী অধ্যপাক ডা. মাহফুজুল কাদের ও সহকারী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক প্রমুখ।
প্রোগ্রামের ২য় দিনের কার্যক্রম বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চমেক কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর নিউরো সার্জারী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ধীমান চোধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামসুল আলম সবুজ উপস্থিত থাকবেন।