আসাদুজ্জামান রিপন
চুলায় কাঠের কয়লা পুড়ে লাল, আগুনের প্রচন্ড তাপ। সে তাপে তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের কাবাব। তৈরির পর সেটি সোজা চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। এই দৃশ্য নগরীর কাবারের জন্য বিখ্যাত কাজির দেউরি স্টেডিয়াম এলাকার দারুল কাবাব রেস্তোরাঁর। শুধু এ রেস্তোরাঁ নয়, এলাকার সব রেস্তোরাঁর দৃশ্যপট একই। দুপুর থেকে কাবাব তৈরির এ মহাযজ্ঞে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারিগররা। কয়েকটি রেস্তোরাঁয় কথা বলে জানা গেছে, স্টেডিয়াম পাড়ায় মূলত কাবাবের জন্য বিখ্যাত। ইফতারের অনন্য রকমের খাবার থাকলেও এখানকার কাবাবের বেশ কদর।
ছোলা-মুড়ির ইফতারের পাতে কাবাবের আগমন বেশ পুরানো। এটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকরা ইফতারে সর্বপ্রথম প্রচলন করেছিলেন। রমজান আসলে নবাবরা তোপ-কামান দেগে রমজানের ঘোষণা দিত। মোগল সম্রাট শাহজাহান ইফতারে কাবার প্রচলন শুরু করেন। কাবাব ছাড়াও তিনি ইফতারের সময় তরমুজের শরবত, তন্দুরি ও নান রুটি, বিরিয়ানি, কোর্মা আর হালিম পছন্দ করতেন। সালমা ইউসুফ হুসেইন রচিত ‘দ্য মোগল ফিস্ট : রেসিপিজ ফ্রম দ্য কিচেন অব এম্পায়ার শাহজাহান’ নামক গ্রন্থে মুঘল শাসনামলের বিচিত্র রন্ধনশৈলীর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
গতকাল কাজির দেউরি স্টেডিয়াম এলাকায় কয়েকটি রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে হরেক রকমের কাবাব তৈরি হচ্ছে। জালি-কাবাব, টিক্কা-কাবাব, সুতি-কাবাব, ফিশ টিক্কা কাবাব, চিকেন শামী কাবাব, রেশমি কাবাব, দোস্ত কাবাব, খাসির কাবাব, বিফ বটি কাবাব অন্যতম। দামও বেশ রয়েছে। জালি পিছ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, খাসির কাবাব ৫০ টাকা, টিক্কা ৪০ টাকা এবং গরু ও খাসির এক কেজি সুতি-কাবাব কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও দেশি চিকেন হালিম, মাটন হালিম, মেজবানের গরুর মাংস, মিহিদানা, জিলাপি, লাচ্ছা জিলাপি, পাটিসাপটা পিঠা, কিসমিস ফিরনি, স্পেশাল পরোটা, দেশি চিকেন তান্দুরি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন চাপ, চিকেন ললিপপ, তন্দুরি, বিফ কাচ্চি ও আকনি বিরিয়ানি, মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি, মাটন পায়া, চিকেন মোমা, চিকেন শর্মা, বিফ এগ রোল, চিকেন এগ রোল, ফিশ টিক্কা কাবাব, টক দই, মিষ্টি দই, ম্যাংগো লাচ্ছি, গরুর নলা, চিকেন শামী কাবাব, সুজির হালুয়া, ঘিয়ে ভাজা লুচি, চিটা পিঠা, চিকেন আলুর চপ, চিকেন সাসলিক, ওরশের বিরিয়ানি, মাটন চুইঝাল, মাটন লেগ কোরমা পাওয়া যাচ্ছে।
রোদেলা বিকেল রেস্তোরাঁয় খুলশী থেকে ইফতার কিনতে এসেছেন মো. মাসুদ। তিনি বলেন, প্রতি বছর রোজায় এখান থেকে ইফতার কিনি। এখানকার শাহি জিলাপি ও বিভিন্ন আইটেমের কাবাবের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
আগ্রাবাদ এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাহমিনা আক্তার। প্রতিদিন অফিস শেষে স্টেডিয়াম পাড়া এলাকা থেকে ইফতারি কিনেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্টেডিয়াম পাড়া এলাকা থেকে ইফতার কিনলে এক ধরনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। সবকিছু চোখের সামনে তৈরি হচ্ছে। খাবারের মান দেখে নেওয়া যায়। তাছাড়া, এখানে ইফতারির একটা বৈশিষ্ট রয়েছে। স্টেডিয়াম পাড়ার কাবাব অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
রয়েল হাটের ম্যানেজার বলেন, ইফতার নিয়ে এবার আমাদের ভিন্ন কোন আইটেম নেই। নিয়মিত আইটেমগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে। কাবাব, চিকেন কলিজাভ‚না, টিক্কা বেশ চলে। আমাদের বিভিন্ন ইফতার পার্টি কিংবা আয়োজনে পার্সেল বেশি চলে।