জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আজহাকে কেন্দ্র করে জেলা ও নগরীর কোনো স্কুল মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। নগরীতে প্রথমে ৬টি ও পরবর্তীতে আরও ৩টিসহ মোট ৯টি গরুর বাজারের অনুমোদন দেয়া দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো গরুর বাজার বসতে পারবে না। উপজেলা পর্যায়ে অনুমোদিত বাজার ছাড়া যত্রতত্র গরুর বাজারও বসাতে পারবে না।
তিনি গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা ও জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির পৃথক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ১০টি সরকারি দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম ও অগ্রগতি উপস্থাপন করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে খাতওয়ারি গত মাসের অপরাধচিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক।
জেলা প্রশাসক বলেন, কোরবানি পশুর কোনো ধরনের রোগ আছে কি না তা যাচাইয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের টিম সার্বক্ষণিক বাজারে থাকবে। পশুর বাজার ঘিরে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার সমন্বয়ভিত্তিক কার্যক্রমগুলোকে প্রধান্য দিয়েছে। জেলাভিত্তিক কার্যক্রমগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সার্বিক উন্নয়নে আমরা সকলে মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করবো। সরকারি প্রত্যেক দপ্তরকে সংস্কারের আওতায় এনে মেধা, দক্ষতা ও সততা দিয়ে আমাদের কার্যক্রমগুলো সুনিশ্চিত করবো। এ জন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া হাসপাতাল, ল্যাব, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলোর রেজিস্ট্রেশন হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন হালনাগাদের আগে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেও সময়মত না পাওয়ার বিষয়ে অনেকের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসা-সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে সরকার গত ১৪ মে থেকে সিআরবিতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসা-সেবা চালু করা করেছে। এখন থেকে রোগীরা সাধারণ কার্ডিয়াক সমস্যা থেকে শুরু থেকে জরুরী সেবাগুলো এখানে এসে গ্রহণ করতে পারবে। বোয়ালখালী ও চন্দনাইশহ বিভিন্ন উপজেলার জরাজীর্ণ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সংস্কারকাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/দপ্তরের সহযোগিতা চেয়েছেন সিভিল সার্জন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জুনায়েত কাউছার বলেন, পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর কোরবানির পশুর বাজার বসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর পশু এখানে আসে, পশু চুরিও হয়। আমরা ইতোপূর্বে কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে চোরাই গরুসহ গরু চোর চক্রের মূল হোতা ও চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। গরু চুরি রোধে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পশুর হাটে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন বসানোর পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। অধিক টাকা বহনকারী গরু-ছাগল বেপারীরা নিরাপত্তা চাইলে তা আমরা নিশ্চিত করবো। পবিত্র ঈদে -বাড়ির নিরাপত্তা ও ঈদযাত্র নির্বিঘ্ন করতে সড়কে যানজট নিরসনসহ সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও সময়োপযোগী করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পৃথক সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জুনায়েত কাউছার, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা, তৌহিদুল আনোয়ার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), মো. ফখরুল ইসলাম (সীতাকুন্ড), মাহফুজা জেরিন (মিরসরাই), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), মো. রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), তাহমিনা আকতার (আনোয়ারা), মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ (বোয়ালখালী), মো. জামশেদুল আলম (বাঁশখালী), রিগ্যান চাকমা (সন্ধীপ), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), জিসান বিন মাজেদ (রাউজান), মাহমুদুল হাসান (রাঙ্গুনিয়া), ফারহানুর রহমান (পটিয়া), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস, পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল, পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উর্মি সরকার, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা মু. মুনতাসির মাহমুদ প্রমুখ। খবর বিজ্ঞপ্তি।