স্কলার্সের ছাত্রী টিনা ৩ দিনের রিমান্ডে

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের শিক্ষার্থী ফারিয়া হক টিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আলম শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক একেএম মঈন উদ্দিন, টিনাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করেছিলেন।শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা, হাসাহাসিকে নিয়ে নৃসংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়। টিনাকে নিয়ে এ হত্যাকাÐ ঘটানো হয়। সব আন্দোলন-সংগ্রামে শরীক হতেন পারভেজ। সে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। দেশজাতি একজন সম্ভবনাময় ছাত্রকে হারালো। কি কারণে, হাসির কারণে। তাকে সর্বোচ্চ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রার্থনা করছি’।
টিনার পক্ষে তার আইনজীবী নাকিব আল মাসাদ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘টিনার সাথে ঐশী নামে আরেকটা মেয়ে ছিল। হাসাহাসির ঘটনা ঘটেছে ঐশীর সাথে। কথা কাটাকাটি হয়েছে ঐশীর সাথে। আর ভিকটিমকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয় তখন টিনা তার বাসার পাশের বাড়িতে টিউশনি করাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনায় জড়িত থাকলে তো সে ১ নম্বর আসামি হতো। টিনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় সাত জন গ্রেপ্তার হয়েছে। নতুন করে তার কাছ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি’।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত টিনার কাছে জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কি না। তখন টিনা বলেন, ‘না’। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বলে বনানী থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মোক্তার হোসেন জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের
টিনাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, ‘পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার কারণে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বনানী থানা এলাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যা বর্তমানেও চলমান আছে। ফারিয়া হক টিনা এবং তার বান্ধবী ফাতেমা তাহসিন ঐশীর ইন্দনে ও মদদে এ ঘটনা সংঘটিত হয় এবং পারভেজ নিহত হয়। আদালতে মাহাথির হাসানের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে টিনার সংশ্লিষ্টতা আসে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হত্যা মামলা’।
তদন্ত কর্মকর্তা তার আবেদনের বলেছেন, ‘টিনাক রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রকৃত ও সঠিক তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়াসহ ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।
ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী টিনাকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ভাটারা থানাধীন নর্দা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পারভেজকে হত্যার ঘটনায় নাম আসা দুই তরুণীকে খুঁজে বের করতে গত ২৩ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এর ১৫ দিন পর এক তরুণীকে গ্রেপ্তারের কথা জানাল পুলিশ।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল হৃদয় মিয়াজীর রিমান্ড শুনানিতে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ছানাউল্যাহ তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘মেয়েরা কোথায়? তাদের ধরেননি কেন?’
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ মামলায় মেয়েদের সন্দেহ করার মত যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাইনি। সিসি ক্যামেরায় তাদের দেখা যায়নি। আবু জর পিয়াস নামে একটা ছেলে সবকিছু অর্গানাইজ করেছে। আমরা তাকে খুঁজছি’।
এরপর বিচারক বলেন, ‘মামলার সঙ্গে মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তারা স্পটে ছিল, মেয়েগুলোর ভ‚মিকা ছিল। তাদের খুঁজে বের করুন’।
ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার জানিয়েছেন।
গত ১৯ এপ্রিল প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে তার মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর আটজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন।
মামলার আজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। তাদের ছাড়াও নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মেহরাজ, হৃদয় মিয়াজী ও মাহাথির গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এজাহারের বাইরে মো. আল কামাল শেখ, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি নামে তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
আসামিদের মধ্যে হৃদয় মিয়াজী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহব্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষারও এ হত্যা মামলার আসামি।
হত্যাকান্ডের পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকান্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকানে খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিলেন পারভেজ। সেসময় তাদের পেছনে অন্য প্রতিষ্ঠানের দু’জন ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজসহ তিনজন এসে পারভেজের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চান। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। পরে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক এসে দুই পক্ষকে প্রক্টরের রুমে ডেকে নিয়ে মীমাংসা করে দিলে মেহরাজসহ তার সঙ্গীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরে আসামিরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ধাওয়া করে পারভেজ ও তার বন্ধু তারিকুল ইসলামকে মারধর এবং পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করে।