এম এ হোসাইন
ঐতিহ্যবাহী নবাব ওয়ালী বেগ খাঁ মসজিদে চলছে এক অপূর্ব ইফতার আয়োজন। যা শুধু রোজাদারদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয়, বরং মানবতা, সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক অনন্য নিদর্শন। প্রতিদিন হাজার হাজার রোজাদার একত্রে বসে ইফতার করেন এ মসজিদে।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে মসজিদের প্রাঙ্গণে এক অপার্থিব আবহ তৈরি হয়। সারি সারি পাটি বিছানো, সামনে সাজানো ইফতারির থালা- রোজাদাররা ধীরে ধীরে এসে বসেন। একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কেউ হাত তুলে দোয়া করেন, কেউ তেলাওয়াতে মগ্ন থাকেন। শিশুরা উৎসুক চোখে খেজুরের প্যাকেট হাতে নিয়ে অপেক্ষা করে, আর বৃদ্ধরা সবার মাঝে স্নেহের পরশ ছড়িয়ে দেন। এই দৃশ্য শুধু ইফতার আয়োজন নয়, বরং মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মাইকে হুজুরের কণ্ঠ যখন দোয়া পাঠ করে, তখন পুরো মসজিদপ্রাঙ্গণ এক প্রশান্তির আবেশে ভরে ওঠে। আকাশে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক অপার্থিব নীরবতা নেমে আসে। ইফতারের মুহূর্ত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সবার চোখ তখন ঘড়ির কাঁটার দিকে। আযানের ধ্বনি ভেসে আসতেই চারপাশে এক স্বর্গীয় অনুভ‚তির সৃষ্টি হয়। হাজারো রোজাদার একসঙ্গে খেজুর মুখে তুলে নেন, কেউ শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে এক চুমুক পান করেন। দীর্ঘ সময়ের ক্ষুধা-তৃষ্ণার অবসান ঘটিয়ে এ যেন এক অনন্য তৃপ্তি। পাশের জনকে খাবার এগিয়ে দেওয়া, ছোটদের প্রতি স্নেহ, বড়দের প্রতি সম্মান- সব মিলিয়ে মসজিদপ্রাঙ্গণ পরিণত হয় সম্প্রীতির এক সুন্দর মিলনমেলায়।
এই আয়োজন শুধু রোজাদারদের পেট ভরানোর জন্য নয়, বরং একতার বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার এক মহৎ উদ্যোগ। বিগত কয়েক বছর ধরে এই আয়োজন হয়ে আসছে, তবে এবারের পুরো আয়োজনের খরচ বহন করছেন একজন দানশীল ব্যবসায়ী।
প্রতিদিন ইফতারির প্লেটে থাকছে ছোলা, মুগ, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, খেজুর, শরবতসহ নানা উপকরণ। উদ্যোক্তা নিজেই মেনু নির্ধারণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করেন, যেন রোজাদারদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সাইয়েদ ফুয়াদুল খলিল আল ফাহমী বলেন, ‘রমজানের প্রথম দিন থেকেই আমরা এই আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন হাজারো মানুষ একত্রে বসে ইফতার করেন, যা সত্যিই অনন্য’।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী ভাইয়ের উদ্যোগে আমরা এ আয়োজন করছি। মসজিদের ব্যবস্থাপনায় তাঁর তত্ত্বাবধানেই প্রতিদিন ইফতারি সরবরাহ করা হয়। প্রত্যেকের হাতে যথাযথভাবে খাবার পৌঁছে দিতে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন’।
এই ইফতার আয়োজন শুধু রোজাদারদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয়, বরং এটি সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। নবাব ওয়ালী বেগ খাঁ মসজিদে এই আয়োজন তাই পরিণত হয়েছে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের মহৎ উদ্যোগে। এই আয়োজন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, রমজান শুধু উপবাসের মাস নয়, এটি মানবতা, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির মাস। এই ইফতার আয়োজন তাই শুধু একটি ইফতার নয়, বরং মানবতার এক অনন্য মিলনমেলা।