সৌদি আরবে জেলে যাওয়া ৮ প্রবাসীকে মুক্ত করার দাবি

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন সৌদি আরবের আবহা ও মাহাইল প্রবাসীরা। সেখানে আবেগের তাড়নায় বহু প্রবাসী জড়ো হয়েছিলেন। দিনটি ছিল ১৬ আগস্ট। পরে সেখানে ‘আইন অমান্যের’ অভিযোগে ৮ বাংলাদেশি প্রবাসীকে ধরে নিয়ে যায় সৌদি পুলিশ। তারা সবাই চট্টগ্রামের বলে জানা গেছে।
তারা হলেন বাঁশখালীর জয়নুল আবেদীন, রহমত উল্লাহ, খলিলুর রহমান, ওমর ফারুক, সাতকানিয়ার সামিউল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউসুফ, সেলিম উল ইসলাম ও বান্দরবানের মো. আশরাফুল ইসলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন পরিবারসহ সৌদি আরবে আছেন।
এদিকে গ্রেপ্তার ৮ প্রবাসীর মুক্তির দাবিতে তাদের স্বজনরা গতকাল শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের স্ত্রী, মা, সন্তান ও স্বজনসহ বেশকিছু প্রবাসীও অংশ নেন। তাদের অনেকের চোখে ছিল জল। কেঁদে কেঁদে অনেকেই বলেন, ‘স্বজনরা সৌদি আরবের কারাগারে, আমরা বেঁচে থেকেও মরে গেছি। আমাদের এখন দেখার কেউ নেই। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে যন্ত্রণায়।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গ্রেপ্তার প্রবাসী জয়নুল আবেদীনের মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত জেসি। তিনি বলেন, আমার বাবা ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। তিনিই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন তিনি ছাত্র আন্দোলন নিহত শহীদ আর আহতদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ অনেকদিন বাবার কোন খবর পাচ্ছি না। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই যাচ্ছে যন্ত্রণায়।
মানববন্ধনে ছিলেন জয়নুল আবেদীনের স্ত্রী রুবি আক্তার ডেইজিও। তিনি বলেন, স্বামী সৌদি আরবের জেলে বন্দী আজ ২২দিন। তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে আমার এক একটা দিন কাটছে এক একটা বছরের মতো। আমার স্বামীসহ গ্রেপ্তার ৮ প্রবাসীকে মুক্তির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাবার মুক্তির দাবিতে পাঁচ বছরের রুকাইয়া তাসনিম জারিফাও দাঁড়িয়েছিল অন্যদের সঙ্গে। রুকাইয়ার একটাই কথা, আমি বাবার মুক্তি চাই, বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গ্রেপ্তার প্রবাসী হাফেজ রহমত উল্লাহর ভাগ্নে এহসানুল হক, মেয়ে তাহমিনা আকতার আর বোন তাহেরা বেগম, সেলিম উল ইসলামের ছেলে মো, কাউসার, মেয়ে সামিরা সুলতানা সানজি, মো. ইউসুফ সিকদারের স্ত্রী উসরাতুল আকতার, ছেলে আবদুল্লাহ সাহাল ও মেয়ে সুমাইয়া সুলতানা।
মানববন্ধনে গ্রেপ্তার প্রবাসীর এ স্বজনেরা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা আমাদের কারও ভাই, কারও স্বামী, কারও বাবা। প্রবাসে থেকে তারা সর্বাত্মকভাব ফ্যাসিবাদ ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে সমর্থন দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার ডাকে সাড়া দিয়ে তারা সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছিলেন। ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর দেশ গঠনে তারা আবারও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে শুরু করেন।
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা করতে গিয়েই এই প্রবাসীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন জানিয়ে স্বজনরা আরও বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা ও আত্মীয়-স্বজন আর্থিকভাবে প্রবাসী সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের গ্রেপ্তারের ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের স্বজনদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন।