সোলার ফেন্সিং অকার্যকর বাড়ছে হাতির উপদ্রব

1

কাপ্তাই প্রতিনিধি

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে বন্য হাতির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। হাতির আক্রমণে ফসলাদি, ঘরবাড়ি নষ্টসহ জানমালের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বন্য হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ নানা ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তুলছে। এতে ফাঁদে পড়ে মৃত্যুসহ হাতি হত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বন্য হাতি ও মানুষের দ্ব›েদ্বর অবসান ঘটাতে প্রায় ৪ বছর পূর্বে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ‘সোলার ফেন্সিং’ নামের বিশেষ বৈদ্যুতিক বেড়া। কিন্তু দেড় থেকে দুই বছর ঠিকভাবে চলার পর সোলার ফেন্সিং ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। হাতির উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বিষয়টি সাধারণের নজরে আসে। ফলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্যহাতির আক্রমনের হাত থেকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষে বন বিভাগ থেকে সোলার ফেন্সিং স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন কাপ্তাই রেঞ্জের জাতীয় উদ্যানের ৮কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সোলার ফেন্সিং প্রকল্প স্থাপন করা হয়।
সোলার ফেন্সিং স্থাপনের পর দেড় থেকে দু’বছর পর্যন্ত বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসেনি। তখন হাতির উপদ্রবও কিছুটা কমেছিল। কিন্তু দেড় দু‘বছর যেতে না যেতেই সোলার ফেন্সিংয়ে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। এরমধ্যে সোলার ফেন্স তারের উপর পাহাড় ধস, গাছের ডাল-পালা ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পাশাপাশি সোলার ফেন্সিংয়ের দামি ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া নিয়মিত সোলার ফেন্সিং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য একজন দক্ষ কর্মচারী নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে অযত্ন, অবহেলায় জর্জরিত অবস্থায় পড়ে আছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত সোলার ফেন্সিং।
প্রসঙ্গত, সোলার ফেন্সিং বা সোলার ফেন্স হচ্ছে এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি। যা দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চাইলে সোলার ফেন্সিংয়ের হালকা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে চলে যাবে। কিন্তু বন্য হাতির প্রাণহানি ঘটবে না। হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এর ভূমিকা আধুনিক বিশ্বে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
এদিকে, কাপ্তাইয়ে বেশ কিছু স্থানে সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হওয়ায় ইদানীং পুনরায় বন্যহাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। এবিষয়ে কাপ্তাই ইউনিয়নের অধিবাসী কবির হোসেন, মো. মোশারফ হোসেন, বাবুসহ একাধিক ব্যক্তি জানায়, সোলার ফেন্সিং চালুর কিছুদিন পর বন্যহাতির উপদ্রব কমেছিল। কিন্তু যখন থেকে এগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন থেকে আবারো হাতির উপদ্রব বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই কাপ্তাইয়ের কোন না কোন লোকালয়ে বন্যহাতি তান্ডব চালাচ্ছে এবং বাড়িঘর ও ফসলাদির ক্ষতি করছে। এতে এলাকাবাসী আতংকে রয়েছে।
অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে এই সোলার ফেন্সিং এভাবে অযতেœ, অবহেলায় অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকায় বিপুল ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এছাড়া এক দেড় বছরের মধ্যে কিভাবে এত দামী জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এখাতে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে বনবিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড় ধস ও ঝড়-তুফানে গাছের ডাল-পালা পড়ে সোলার ফেন্সিংয়ের কিছু কিছু জায়গায় তার নষ্ট হয়ে গেছে। দুটি সোলার ফেন্সিংয়ের ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ায় কাপ্তাই থানায় জিডি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে। বাকীগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে।

এদিকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সোলার ফেন্সিং বন্ধ রয়েছে। নষ্ট হওয়া সোলার ফেন্সিং পুনরায় চালু করাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট জানিয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
গত ৫ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই সহকারী বন সংরক্ষক মাসুম আলম জানান, সোলার ফেন্সিং সব জায়গায় নষ্ট হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় নষ্ট হয়েছে। নষ্ট সোলার ফেন্সিংয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সহসাই সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানটি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ১৩ হাজার ৫০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে সেগুন, মেহগনি, জারুল, গামারীসহ নানা প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে বন্য হাতি, হরিণ, বানর, হনুমান, বন বিড়ালসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু এবং বিভিন্ন ধরনের পাখির বিচরণ রয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক, কাপ্তাই নৌবাহিনী সড়ক ও কাপ্তাই-রাঙামাটি আসামবস্তি সড়ক রয়েছে। এসব সড়কসহ লোকালয়ে প্রায়ই বন্য হাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এতে জানমালের বেশ ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।