চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম উপজেলা হাটহাজারীর সমাজসেবক সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। যিনি আওলাদে রাসূল রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিক্বত হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.)’র একজন মুরিদান ছিলেন। সাদামনের মানুষ হিসাবে এলাকার শিক্ষা বিস্তার ও ধর্মীয় সাধনায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণপুরুষ। প্রতিনিয়ত আলোর পথে নিজেকে নিবেদন করে চলতেন। অত্যন্ত প্রচারবিমুখ এ কর্মবীরের অবদান শিক্ষার ভিত মজবুত করতেন। একজন সুন্নীভক্ত হিসাবে দেশ-বিদেশের বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ করেছেন। তারই আলোকে তিনি জগৎ আলো করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও গোড়ামীর বিরুদ্ধে নিজেকে নিবেদন করে চলেছিলেন বলে এলাকাবাসীর অভিমত। জানা যায়, সমাজসেবক শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাটহাজারী থানার ২নং ধলই ইউনিয়নের পশ্চিম ধলই প্রকাশ সফি নগর গ্রামে ১ নভেম্বর ১৯৩৬ সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম আবদুল গণি সরকার। ১৯৫২ সালে কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় হতে তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড ঢাকার অধীনে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। তৎপর নাজিরহাট কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে সিলেট জেলার জরিপ বিভাগে চাকরিরত ছিলেন। ১৯৫৯ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চাকরি হতে ইস্তফা দেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, কক্সবাজারসহ সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, হাটহাজারী, মিরশ্বরাই, স›দ্বীপসহ বিভিন্ন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চাকরি করেন। তিনি একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে সমাজের বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এবং সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি হযরত শাহ্ মনোহর মসজিদের (পুনঃনির্মাণ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। হযরত শাহ্ মনোহর মাজার পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারী হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি পশ্চিম ধলই উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং আজীবন দাতা সদস্য হিসেবে ১৯৮৬ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ২০০৪ পর্যন্ত অভিভাবক সদস্য ছিলেন। তাহেরিয়া সাবেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা (সফি নগর, কাটিরহাট, হাটহাজারী), তারই গ্রামের বাড়ির সম্মুখে অবস্থিত। এ মাদ্রাসায় দাতা সদস্য ছাড়াও পরিচালনা পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা হিসাবে তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তিনি কলকাতা, দিল্লি, আজমির শরীফ মাজারসহ দেশের অনেক ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ ও জেয়ারত করেন। ১৯৯৩ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি নগরীর মোমিন রোডের কদম মোবারক এলাকার মেসার্স আলমগীর এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। দেশের বিভিন্নস্থানে এমন অসংখ্য মহৎপ্রাণ ব্যক্তি আছেন। সমাজ বিনির্মাণে যাদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা প্রাতঃস্মরণীয়। নমস্য সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম তাদের অন্যতম। তাদের ফেলে আসা পথ অনুকরণীয়। যাদের অবদানকে আলোর পাদপ্রদীপে আনা হলে জাতি, সমাজ উপকৃত হবে। এলাকাবাসী এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।