পূর্বদেশ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং বর্তমান সরকারের টিকে থাকার পেছনে সেনা বাহিনীর ভূমিকাই বড় দেখছেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার। তবে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ‘ব্যর্থ হয়ে গেছে’ বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, ‘সৈনিকরা গুলি করতে অস্বীকার করেছিল বলে এই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। সেনা প্রধানের সাপোর্টের কারণে এই সরকার এখনও টিকে আছে। সেনাপ্রধান যদি এই সরকারকে সমর্থন না করেন, তাহলে সরকার মুহূর্তের ভেতরেই পড়ে যাবে। তার শুভবুদ্ধির ওপর ভিত্তি করে এটা দাঁড়িয়ে আছে’।
তবে ‘সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার’ চান না জানিয়ে তিনি বলেন,‘আমাদের সৈনিকরাও চায় না’।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণতন্ত্রে শাসিত এবং শাসক বলে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। গণতন্ত্রে জনগণ নিজের শাসক। আইন এবং রাজনীতির সম্পর্ক আমরা বুঝি না বলে এবার গণঅভ্যুত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে’।
৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার বঙ্গভবনে শপথ নিয়ে ভুল করেছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, আমরা সবাই মিলে একটা গণঅভ্যুত্থান করেছি। গণঅভ্যুত্থানে কোথাও শপথ করার প্রয়োজন হয় না। যারা গুলির মুখে প্রাণ দিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা আপনি (মুহাম্মদ ইউনূস) দিতে পারতেন যদি শহীদ মিনারে বা রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে বলতেন, ‘আমি ক্ষমতায় এসেছি, যেহেতু তুমি প্রাণ দিয়েছ, আমি ক্ষমতায় এসেছি তোমার রক্তের ওপর, আমি তোমার রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না। কিন্তু তা না করে যখনই আপনি বঙ্গভবনে ঢুকেছেন আপনি কিন্তু সেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তার কুফল এখন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দেখবেন’।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়াটা ‘জরুরি ছিল’ মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাতে আমরা টের পাই আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের বেহুঁশ অবস্থা- এটা আমাদেরকে ভুল দিকে নিয়ে যাবে’।
গণঅভ্যুত্থানের পরেও জনগণকে উপেক্ষা করা হচ্ছে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটা অদ্ভুত ব্যাপার। এতগুলো মানুষ শহীদ হয়ে গেল, এতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, তারপরেও কিন্তু আমরা জনগণকে উপেক্ষা করেছি। আপনি ধরে নিচ্ছেন তথাগত রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতিনিধি। এটা ঠিক নয়’।
বিএনপি কেন রাষ্ট্রপতিকে চায়?
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের বিরোধিতা করায় বিএনপিরও সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে আমরা যে দুর্বল মুহূর্তে পড়ে গেছি, এই সময় বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল; তাদের কাছে অনেক বেশি দায়িত্ব আমরা আশা করি। বিএনপি কেন চুপ্পুকে (সাহাবুদ্দিন) রাখতে চায় আমি কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। এটার কোনো সাংবিধানিক যুক্তি এবং রাজনৈতিক যুক্তি নেই’।
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ এই গোলটেবিলের আয়োজন করে ‘দুর্নীতি ও রাষ্ট্রপতি বা সংস্কার’ বিষয়ে। আলোচনায় জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচন করে কিছু সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দেন ফরহাদ মজহার। বলেন, ‘নির্বাচনের আগে একটা নতুন খসড়া তৈরি করতে হবে, সেই খসড়ার আলাপ আলোচনা করার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে’।