সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ায় সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ীরা

3

ফারুক আবদুল্লাহ

দেশে কোনোধরনের মহামারি কিংবা দুর্যোগ এলেই মানুষের জীবনকে পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। ভোক্তারা একপ্রকার অসহায় হয়ে এসব সামগ্রী উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য হয়। কিন্তু এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে। তখন করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। সেই সুযোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। একইভাবে সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর আবার সংক্রমণের হারে বাড়ছে। এরইমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
চট্টগ্রামের ওষুধের প্রধান পাইকারি বাজার হাজারী গলিসহ নগর ও জেলার ফার্মেসিগুলোতে একমাসের বেশি সময় ধরে হেক্সিসল উধাও হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বলছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামালের সংকটের কারণে বাজারে যথাসময়ে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। একইভাবে করোনার প্রাথমিক সুরক্ষা সমাগ্রী মাস্কের দামও বেড়ে গেছে। ভালো মানের মাস্ক পাইকারিতে দুই-তিনগুণ বেড়ে গেছে। বাজারে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ওষুধের দোকানে বা ফামের্সিতে করোনা ভ্যারিয়েন্ট ও ডেঙ্গু জ্বরে ব্যবহৃত ওষুধ এবং সরঞ্জমাদি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি না করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদেরকে সর্তক করেছে বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) চট্টগ্রাম শাখা। সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহসিন উদ্দিন ও সহ-সভাপতি, মো. আজগর আলীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সারাদেশে করোনা ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রার্দুভাব দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত ওষুধ, মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ফামের্সিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিসিডিএস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, যেহেতু আমাদের পেশা সেবামূলক। এই পেশার মান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সকলকে একযোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সুরক্ষা সামগ্রী সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যের চেয়ে কোনক্রমেই বেশি দামে বিক্রয় না করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশক্রমে ব্যবসায়ীদের আহবান জানাচ্ছি।
হাজারী লেইনের পাইকারি ব্যবসায়ী ও বিসিডিএস চট্টগ্রাম জেলা শাখার কার্যকরী সদস্য সুরেশ বড়ুয়া বলেন, মাঠ পর্যায়ে তদারকির পাশাপাশি মহামারী করোনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। তাহলে বাজারে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করবে। অসাধুরা যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমাদের সহযোগিতা সবসময় আছে, থাকবে।
চট্টগ্রাম ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক মো. ফজলুল হক বলেন, করোনা সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করতে না পারে এজন্য আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। আমরা, আপনারা সবাই মিলেই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
এসিআই দক্ষিণ জোনের সেলস ম্যানেজার কামরুজ্জমান বলেন, হঠাৎ করে হেক্সিসল এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর চাহিদা যেভাবে বাড়ছে কাঁচামাল পর্যাপ্ত না থাকায় বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। এই বিষয়টি আমরা কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করেছি। আশা করি শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।
এদিকে গত ২৫ জুন বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি চট্টগ্রামের উদ্যোগে নগরীর হাজারী লেইনে বৈশ্বিক মহামারী ভ্যারিয়েন্ট করোনা ও ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব বিষয়ে সচেতনতামূলক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আপনার অবহেলা করবেন না। আমরা যত অবহেলা করবো, ক্ষতি তত আমাদের হবে। মাস্ক সহজ একটি জিনিস, আমরা যদি মাস্ক পরিধান করি সহজে সংক্রমিত হবো না।
এর আগে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সচেতনতা, মাস্ক পরা ও ভিড় এড়িয়ে চলাই করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এরই মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। এরপর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন সাতজন।