সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছে

1

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

১৬ বছর বয়সী মো. জাহিদুল ইসলাম। বাবা-মা নেই। গত ৫ মাস আগে ভর্তি হয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া জিয়ানগর এতিম ও দুস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। বিনামূল্যে এই প্রতিষ্ঠানে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা পেয়ে তিনি হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়েছেন ইলেকট্রিক্যালের জটিল বিষয়গুলো। মাস খানেক পরেই দক্ষ হয়ে কাজে বেরিয়ে পড়বেন তিনি। জাহিদ এর মতো ৪৫ তম ব্যাচে আরো ৭০ জন (আবাসিক ও অনাবাসিক) প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল নিয়ে একেবারেই বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগরে অবস্থিত ‘এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ থেকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরুতে দর্জি ও পোশাক তৈরি, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিক্স (রেডিও, টিভি এবং রেফ্রিজারেটর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ) এবং ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও মেরামতের প্রশিক্ষণ শুরু করে। ২০১৫ সালের পর শুরু হয় আরো দুটি নতুন ট্রেড; আধুনিক কম্পিউটার ও ডিজিটাল ট্রেনিং এবং মোবাইল সার্ভিসিং। প্রতি অর্থ বছরে ৬ মাস মেয়াদে ২ টি ব্যাচে প্রতিটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য ৫০ জন আবাসিক ৫০ জন অনাবাসিক মোট ১০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বিনামূল্যে সব ধরনের ভালো সুযোগ-সুবিধা। দক্ষ প্রশিক্ষকের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ছাড়াও রয়েছে আবাসিক সুবিধা। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন দেওয়া হয় তিন বেলা খাবার ও দুই বেলা নাস্তা। আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীকে মেয়াদ শেষে দেওয়া হয় নগদ চার হাজার টাকা। তাছাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসা যাওয়া বাবত যাতায়াত ব্যয় দেওয়া হয় দৈনিক ২৫ টাকা হারে। ৪ দশমিক ৯ একর ভ‚মির উপর প্রতিষ্ঠিত কারিগরি এ প্রতিষ্ঠানটি নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একদিকে যেমন কারিগরি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
এ প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুমোদিত পদ রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে নিরাপত্তা প্রহরী এবং ঝাড়ুদারের ৩ টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন এবং উপ-তত্ত¡াবধায়ক পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। অবশিষ্ট ১১ টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এমনকি কিছু কিছু পদ রয়েছে, যেগুলোতে শুরু থেকেই কোনো জনবল দেওয়া হয়নি। ট্রেডের সংখ্যা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষক নাই। তাই সবগুলো ট্রেডে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখা গেছে, কারিগরি এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশাল একটি লাইব্রেরি, হল রুম ও ডাইনিং রুম। রয়েছে বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদন সামগ্রীর ব্যবস্থা। সমগ্র এলাকাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। রান্না ঘর, ডাইনিং রুম প্রশিক্ষণ ক্লাস, ডরমিটরি এবং সুপরিসর শিক্ষা ভবন। ল্যাবে রয়েছে পর্যাপ্ত কম্পিউটার, শিক্ষার সামগ্রী ও প্রচুর যন্ত্রপাতি। যেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গায় সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ফল-ফলাদির বাগান। এ প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও মেরামত প্রশিক্ষণার্থী বিজয় চন্দ্র দাস এবং আধুনিক কম্পিউটার ডিজিটাল ট্রেনিং প্রশিক্ষণার্থী অং সিং মারমা বলেন, আবাসন সুবিধা ছাড়াও প্রতিদিন তিনবেলা খাবার ও দুই বেলা নাস্তা পাচ্ছে তারা। ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও মেরামত কোর্সের প্রশিক্ষক রিন্টু চাকমা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষক সবুজ মুহুরি বলেন, দূর দুরান্ত থেকে অনেক প্রশিক্ষনার্থী এসে এখানে ভর্তি হয়েছে। দুস্থ ছাড়াও এখানে অনেক এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে।
জানতে চাইলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির উপতত্ত¡াবধায়ক মো. ছানাউল্লাহ্ বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বিভিন্ন চাহিদা চেয়ে চিঠি লেখা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় জেলা প্রশাসক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীদের এককালীন অনুদান ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াত ব্যয় ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকায় উন্নীত করার জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলকে ঘিরে তৎকালীন সরকার ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত নির্মাণ করে এতিম ও দুস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল পাকা ভবন। কেন্দ্রটি ১৯৯৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে শুরু হয় ভর্তির কার্যক্রম।
জিয়াউর রহমানের প্রথম সমাধিস্থল সংস্কার, সমাধি স্থলে পাহাড়ি ঢলের পানি সরানোর জন্য ড্রেন ও দেয়াল উঁচু করা, প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক স¤প্রসারণ ও নির্মাণ ও সম্মেলন কক্ষ সংস্কার কাজ শীঘ্রই সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আরম্ভ করার আশা করা হচ্ছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছওে সমাধিস্থলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আরও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে। এ অর্থ বছরে এতিম, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। জুলাই থেকে ৬ মাস মেয়াদী ভর্তি চলছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রের উপ-তত্ত¡াবধায়ক মো. ছানাউল্লাহ আহŸান জানিয়েছেন।