সীতাকুন্ড নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার

1

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

প্রশাসনের কোনো অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল প্রভাবশালী বালু উত্তোলনকারী চক্র। বালু উত্তোলন করার কারণে জেলেদের মাছ ধরতে কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। বিষয়টি নিয়ে বালু খেকো চক্রের সদস্যদের সাথে জেলে রাম দাসসহ কয়েকজনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বালু উত্তোলনকারীর লোকজন রাম দাসকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গভীর সাগরে ফেলে দেয়। এরপর থেকে রাম দাসের সন্ধানে তাঁর মা, স্ত্রী ও স্বজনরা সাগরের পাড়ে পাড়ে খুঁজতে থাকে। রামদাসের নিখোঁজের পর অভিযোগ জানার পরও সরকারি কোনো সংস্থা রাম দাসকে খুঁজে পেতে সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
গত শুক্রবার সকালে উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নে গুলিয়াখালি উপকূলের পাশে সাগরে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় জেলেরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে নৌ পুলিশ রাম দাসের স্বজনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি রাম দাসের বলে শনাক্ত করে। এরপর গাউছিয়া কমিটি সীতাকুন্ড উপজেলা শাখার সহযোগিতায় নৌ-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত রাম দাসের বয়স (৩২)। তিনি উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ মাহমুদাবাদ জেলেপাড়া এলাকার মৃত শীতল জলদাসের ছেলে।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) দুপুরের দিকে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় মারধর করে তাকে সাগরে ফেলে দিয়েছিল বালু উত্তোলনকারীরা। এসময় জেলে রাম দাসের ছোট ভাই লিটন জলদাসকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। পরে হাতিয়া থেকে অপহৃত জেলেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিখোঁজের পাঁচদিন পর মুরাদপুর সাগর উপক‚ল এলাকা থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
নিহত রাম দাসের ছোট ভাই লিটন জলদাস বলেন, সামান্য কথা কাটাকাটিতে তারা যে এভাবে আমার ভাইকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে সাগরে ফেলে দিবে আমরা বুঝতে পারিনি। এরা খুবই খারাপ লোক। প্রায় সময় জেলেদের সাথে তাদের বাগ-বিতন্ডা হতো। নিখোঁজের পাঁচ দিনের মাথায় আমার ভাইকে গুলিয়াখালি সাগর উপক‚ল এলাকা থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। আমি ও আমার পরিবার আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। হত্যাকারীদের কারণে আজকে আমার ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানরা অসহায় হয়ে পড়লো।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠুন বৈষ্ণব বলেন, জেলে রাম দাসের হত্যাকান্ডটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের হত্যাকান্ড যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে আমরা সকলকে সজাগ থেকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকে রাম দাসের স্ত্রী-সন্তান পরিবার কত অসহায় অবস্থায় পড়েছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিতে হবে। অভিযুক্তদের বিচার হতে হবে।
সীতাকুন্ডের কুমিরা নৌ-পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, জেলে অপহরণের খবর পেয়ে দ্রæততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে ৫ ঘণ্টার মধ্যে একজন জেলেকে উদ্ধার ও ‘এমভি নাবিল ফারহান’ নামের একটি বাল্কহেডসহ ৬ জনকে আটক করি। নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত ছিল। শুক্রবার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিরাও আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রæয়ারি সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার সময় উত্তোলনকারীদের বাধা দেন রাম দাস (৩২) ও লিটন দাস (৩০) নামের দুই ভাই। এক পর্যায়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষ। তখন দুই ভাইকে জোর করে বাল্কহেডে তুলে নেয় বালু উত্তোলনকারীরা। সেখানে তাদের মারধর শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে রাম দাসকে পিটিয়ে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয় ও লিটন দাসকে নিয়ে বাল্কহেড চালিয়ে উত্তর দিকে চলে যায় বালু উত্তোলনকারী দল। ঘটনার খবর পেয়ে নৌ পুলিশের একটি টিম স্পিড বোটে সাগরে অভিযানে নামে।
একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে হাতিয়া উপজেলার থানারহাট বাজার ঘাট এলাকা থেকে নিখোঁজ জেলে লিটন দাসকে উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। একই সময় ভোলা চ্যানেল থেকে বাল্কহেডসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়। তবে পানিতে ফেলে দেওয়া বড় ভাই রাম দাসকে চার দিন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার সকালে মুরাদপুর গুলিয়াখালি সাগর উপক‚লে একটি লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।