সীতাকুন্ড প্রতিনিধি
সীতাকুন্ডে মাদক ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. কলিম উদ্দিন (৩৪) নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা খুন হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগাহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। সে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ফেদাইনগর এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে পালন করছিলেন এবং একই ওয়ার্ডের দক্ষিণ ফেদাইনগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবু নাছেরের ছেলে। এর আগে যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো তিনজন। তারা হলেন মো. সাদ্দাম (২৮), মো. সেলিম (৪২) ও সাখাওয়াত (৩৬)।
জানা যায়, বুধবার রাতে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট বাজারে বিএনপি নেতারা আসন্ন গরু বাজার নিয়ে একটি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মাসুম ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. ইসলাম হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগমুহূর্তে পার্শ্ববর্তী স্থানে মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে নিহত কলিম উদ্দিনের অনুসারি আপেলকে মারধর করে সাখাওয়াত সাকার অনুসারীরা। পরবর্তীতে কলিম উদ্দিন ও আপেলসহ ১০/১৫ জন মারধরের প্রতিবাদ করতে আসলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে রাম দা ও ছুরিকাঘাতে প্রতিপক্ষের আঘাতে গুরুতর আহত হন কলিম উদ্দিনসহ আরো তিনজন। এরপর বৈঠকে থাকা বিএনপি নেতৃবৃন্দ দৌড়ে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে আহতদের সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার কলিম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে কলিম উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। বাকিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, নিহত কলিম উদ্দিন সাবেক বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী শরীফের অনুসারি ও যুবদল কর্মী সাখাওয়াত ও উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেনের অনুসারী।
এসব বিষয়ে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের সাবেক বিএনপি মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী শরীফ বলেন, সাখাওয়াত দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশে ফিরে আসেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা মাদক বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল তারাই সাখাওয়াতের ছত্রছায়ায় এলাকার দর্শনীয় স্থান সহস্রধারা ঝর্নাসহ পুরো এলাকাকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছে। এই মাদকের বিচরণে নষ্ট হচ্ছে যুব সমাজ। আমিসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ অনেকবার বুঝিয়েছি এসব ব্যবসা বাদ দিয়ে ভালো কিছু করতে।
উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. ইসলাম হোসেন বলেন, এলাকার বিভিন্ন বিয়য়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ছোট দারোগাহাট বাজারে একটি বৈঠকে মিলিত হই। যে বৈঠকে ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি আলাউদ্দিন মাসুমও ছিলেন। এমন সময় অপর একটি পক্ষ দেশিয় অস্ত্র ও ককটেল ফাটিয়ে আমিসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সাখাওয়াতের উপর আক্রমণ করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। আমরা সবাই তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। আমি নিজেও উভয়ের মধ্যে পড়ে যাই। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কলিম উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। সম্ভবত তাদের মধ্যে মাদকসহ নানা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ থাকতে পারে। আমি নিজেও মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সবাইকে সতর্ক করে আসছিলাম।
সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মাদকসহ নানান ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘর্ষে কলিম উদ্দিন নামে একজন নিহত হয়েছেন। আমরা নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করেছি। এখনো কেউ থানায় আসেনি। আমরা মামলা পরবর্তী আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।