সিলেটে বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ বিপর্যস্ত

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিন দফায় বন্যায় আক্রান্ত হলো সিলেট। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। দূষিত পানি পান ও বানের পানিতে চলাফেরা করায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন) ও চোখের রোগ দেখা দিয়েছে দুর্গতদের মাঝে।
সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৬ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি মৌলভীবাজারে পানিতে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের জন্য সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জসহ চার জেলায় ৬৭১ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ৪০৩ মেডিক্যাল টিম।
বিভাগের চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বন্যাকবলিত হয়েছে সিলেটের ১৩ উপজেলার ১০১ ইউনিয়ন ও কয়েকটি পৌরসভা। একইসঙ্গে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের ১ হাজার ১১৬ গ্রাম। বিভাগের ৪০ উপজেলার মধ্যে দুর্গত উপজেলা ২৬টি। ৩৩৪ ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১৫৩ ইউনিয়ন।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার পর্যন্ত সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ১২টি দুর্গত উপজেলায় ১০১ ইউনিয়নের মধ্যে ৬৭টি বন্যায় আক্রান্ত। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৪৪৬টি। এখানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ১৩৬ মেডিক্যাল টিম। এখন পর্যন্ত ৮১ জন ডায়রিয়ায় ও ৩২ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। চর্মরোগে আক্রান্ত হন ৫০ জন। এ ছাড়া চোখের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ জন। এ ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৩ জন। তাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে মেডিকেল টিম।
সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ১১টি বন্যাদুর্গত। এসব উপজেলার ৮৮ ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৫৯টি। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৪৩টি। এখানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ৯৯টি মেডিকেল টিম। এখন পর্যন্ত ১৫ জন ডায়রিয়ায় ও ছয় জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬ জন। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন।
হবিগঞ্জের নয় উপজেলার মধ্যে চার ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১১টি। এখানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ৯৪টি মেডিকেল টিম। ৪২ জন ডায়রিয়ায় ও ৩২ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ জন। এ ছাড়া চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ জন।
মৌলভীবাজারের সাত উপজেলার মধ্যে পাঁচটি বন্যাদুর্গত। এর মধ্যে ২৩টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৭১টি। স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ৭৪ মেডিকেল টিম। এখন পর্যন্ত ৪১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৩ জন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের’।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরবর্তীতে নানা রোগবালাই দেখা দেয়, এটা স্বাভাবিক। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বন্যাদুর্গতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভাগে আমাদের ৪০৩টি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে’।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার বন্যায় সিলেট বিভাগে ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২১৩টি, সুনামগঞ্জে ৪৫টি, হবিগঞ্জে আটটি, মৌলভীবাজারে ১০৯টি। বন্যায় বিভাগে ১২ লাখ ৯২ হাজার ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৮৭, সুনামগঞ্জে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১, হবিগঞ্জে ২ লাখ ৭১৩ এবং মৌলভীবাজারে ৩ লাখ ১৪ হাজার ২৭৭ জন। বিভাগের ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২০ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৯ হাজার ৮৩১, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৪৮১, হবিগঞ্জে ১ হাজার ১২০, মৌলভীবাজারে ৮ হাজার ৩০১ জন। বিভাগে ২ হাজার ৪৮৮টি গবাদিপশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ১ হাজার ৫৪৫টি, সুনামগঞ্জে ১০৫টি, হবিগঞ্জে ১২৬টি ও মৌলভীবাজারে ৭১২টি।
জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর : জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে খুব ধীরগতিতে পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাদুর্গতরা। এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি। রয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার (গতকাল) সকাল ১০ টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও সরিষাবাড়ীর জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, খুব ধীরগতিতে পানি কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এ ছাড়া ২৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানীয় ও আঞ্চলিক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গতদের জন্য ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে’।