আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী
রোজা এমন একটি এবাদত, যা পালনের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও আত্মিক প্রভূত উপকার লাভে সক্ষম হন। রোজার কঠিন সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দারা স্বীয় নাফস্কে এমনভাবে আয়ত্ত্বাধীনে নিয়ে আসে, যাতে ভাল কাজের প্রতি নাফসের যাবতীয় বাধা-বিপত্তি থেকে রক্ষা পায়। ফলে স্বাচ্ছন্দে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করতে পারে।
নাফস্ শুধু পেট ভরে আহার, আরাম-আয়েশই সদা কামনা করে। নাফসের কামনা বাসনা যতই পূরণ হয় ততই বান্দা অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল হতে থাকে। তাই এ খারাপ নাফস্কে দমনের অব্যর্থ ও কার্যকর পন্থা শরীরের উপবাস বা রোজা। তাই আল্লাহর নেক বান্দারা সদা সর্বদা নাফসের বিরোধীতায় বছরের অধিকাংশ সময় রোজা পালন করে থাকেন।
অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন, রোজার কারণে শরীর ও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। এ ধারণাটা মোটেই ঠিক নয়, এ মর্মে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশদ করেছেন ‘সুমো তাসিহহু’ অর্থাৎ রোজা রাখ, সুস্থ থাকবে। এটি একটি ছোট হাদিস।
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞগণ রোজার বহু উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। রোজা সুস্বাস্থ্যের নিয়ামক হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকেও দিন দিন রোজার বহুবিদ উপকারিতা প্রকাশ পাচ্ছে। উদরপূর্তি করে খাদ্য খেলে শরীর উন্নত হয় না। বরং সুস্বাস্থ্য কম খাওয়ার মধ্যে নিহিত। কম খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, পেট ভর্তি করে খাওয়া অপেক্ষা মানুষের জন্য মন্দ দ্বিতীয় কোন কাজ নেই।
আদম সন্তানের টিকে থাকার জন্য কয়েক লোকমা খাওয়াই যথেষ্ট। যদি তা না করে অর্থাৎ বেশি খেতে চাই, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানি এবং অপর তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা দরকার (আল হাদিস)। অর্থাৎ কম খাওয়া সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তেমনি কম খাওয়ার আত্মার পরিশুদ্ধি তথা আল্লাহ্র ইবাদতের প্রতি উৎসাহী ও অনুরাগী করে তোলে। তাই যুগে যুগে সুফি-সাধক, আল্লাহ্ প্রেমিক বান্দাগণ বেশি বেশি নফল রোজা আদায় করতেন।
মানুষ যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করেন, তা পাকস্থলিতে পৌঁছার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হজম হয়ে যায়। সারা বছর পাকস্থলি একই ভাবে ক্রিয়াশীল থাকায় এর ভিতর একপ্রকার বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘ এগার মাস এভাবে পাকস্থলিকে ব্যস্ত রাখার পর মাত্র একমাস অবকাশ দেওয়া দরকার। যার ফলে পাকস্থলি ওই বিষাক্ত গ্যাসের ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে শক্তিশালী হয়। রোজা পালনকারীর ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়, স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। অনেক জটিল রোগ শরীর থেকে বিদায় নেয়।
অতএব রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এমন এক নিয়ামত, যা দ্বারা বান্দার শরীর ও আত্মা পরিশুদ্ধি লাভে সক্ষম হয়। তবে শুধু শরীরের উন্নতির লক্ষ্যে নয়। আল্লাহর ভয় অন্তরে ধারণ করে পূর্ণ ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে সওয়াবের নিয়তে রোজা আদায় করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক তরজুমান