সিভাসুর উত্থান, প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও ভেটেরিনারি শিক্ষার প্রসার ও প্রভাব – সাফল্যের এক উজ্জ্বল সময়ের নিদর্শন

1

অধ্যাপক মো. আহসানুলহক (রোকন)
বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক তথা কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম একটি ক্ষেত্র হতে পারে কৃষি এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ- এই তত্ত্বের আলোকেই ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল শহীদ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা গ্রহণের পর ৩০ এপ্রিল ১৯-দফা প্রকাশ করেন। এই দফার ৫ ও ৬ নং এ ছিলো- ৫. সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে জোরদার করা। ৬. দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং কেউ যেনো ভূখা না থাকে তার ব্যবস্থা করা। শহীদ জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায়, সেই ১৯৭৭ সাল থেকেই বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রকে উন্নয়নের জন্যে নানাভাবেপরিকল্পনা করে পরিপুষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠনের পরবর্তীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখেন এবং সাধারণ জনগণকে নানাভাবে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করেন। এক অধিবেশনে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে, রাস্তার দুইধারে ফলের গাছ লাগাতে হবে এবং রাস্তার দুইপাশের ঢালুতে শাকসবজী চাষাবাদ করতে হবে, প্রত্যেক পুকুরে মাছের চাষ করতে হবে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে হাঁস-মুরগির খামার করতে হবে। গ্রামের প্রত্যেকনারী-পুরুষ কাজে ব্যস্ত থাকবে। মেয়েরা ঘরে কুটিরশিল্প করে তাদের পরিবারের আয় বৃদ্ধি করবে।’ শহীদ জিয়া দারুনভাবে তাঁর দূরদৃষ্টিও প্রগতিশীল ভাবনার মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর তার যুগান্তকারী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে কাজ করে যান তাঁরই সহধর্মীণী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১-৯৫ সালে দ্বিতীয়বার বিএনপি সরকার গঠনের পর কৃষিখাতের জন্যে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান এর বিজ্ঞ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ডেইরি খামারিদের প্রশিক্ষণ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও সরকারি উদ্যোগে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়। নানা ধরনের সরকারি সহযোগিতায় সেই সময়ে বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের দারুণ উন্নতি হয় এবং দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
১৯৭৭-৭৮১৯৭৯-৮০১৯৮১-৮২১৯৯১-৯২১৯৯৩-৯৪
দুধ উৎপাদন (লাখ মেট্রিকটন)৪.৮১ ১.২২ ১.৩৩ ১৩.৫৪ ১৩.৭৫ ১৯৯৫-৯৬ ২০০১-০২ ২০০৩-০৪ ২০০৫-০৬ ২০২৩-২৪ দুধ উৎপাদন (লাখ মেট্রিকটন)১৩.৪৪ ২৭.০৬ ২৭.০৫ ২২.৫৪ ১৫০.৪৭[প্রাপ্যতা (২০২৩-২৪): ২৩৪.৩৫মি.লি./জনপ্রতি/দিন]৭বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে পোল্ট্রি খামার শুরু আশির দশক থেকে হলেও, তা শিল্পে (ইন্ডাষ্ট্রি) রূপ পেতে থাকে নব্বই-এর দশক থেকে তদানীন্তন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের মাধ্যমে। তখনকার সরকারের গৃহীত যুগোপযোগী নীতিমালায় প্রাইভেট খাত এই বাণিজ্যিকরণে এগিয়ে আসে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে ডিম ও মুরগির মাংসের যোগান সহজ-লভ্য হতে থাকে এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খাতে বর্তমানে প্রায় আশি লক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান। বিএনপি তৃতীয় পর্যায়ে সরকার গঠনের পর প্রাণি (পশু) রোগ আইন-২০০৫ অনুমোদিত হয়, যার দরুণ প্রাণির উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হতে থাকে। এর মাধ্যমে কেবল প্রাণিসেবাই নিশ্চিত হয়নি, দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরির বিষয়টিও প্রাধান্য পায়।
১৯৭৭-৭৮ ১৯৭৯-৮০ ১৯৮১-৮২ ১৯৯১-৯২ ১৯৯৩-৯৪ডিম উৎপাদন (কোটি)
৯.০৯১ ২.৪১০ ১৪.০১০ ১৩.৫৪ ২৫.৪৮
১৯৯৫-৯৬ ২০০১-০২ ২০০৩-০৪ ২০০৫-০৬ ২০২৩-২৪
ডিম উৎপাদন (কোটি)
২৬.৮৮ ৫০.১৮ ৫০.১৮ ৫০.৯৪ ২৩.৭৫৭
[প্রাপ্যতা (২০২৩-২৪): ১৩৫.০৯টি/জনপ্রতি/বৎসর]৭
১৯৭৭-৭৮ ১৯৭৯-৮০ ১৯৮১-৮২ ১৯৯১-৯২ ১৯৯৩-৯৪
মাংস উৎপাদন (লাখ মেট্রিকটন, সকল ধরনের গবাদিপশু ও মুরগি)
১.৮৯ ২.১১০ ২.৫১০ ৩.১৪ ৩.৫৪
১৯৯৫-৯৬ ২০০১-০২ ২০০৩-০৪ ২০০৫-০৬ ২০২৩-২৪
মাংস উৎপাদন (লাখ মেট্রিকটন, সকল ধরনের গবাদিপশু ও মুরগি)
৪.৬৪৪.৯৪৫.১৪৫.১৪৯২.৩৭
[প্রাপ্যতা (২০২৩-২৪): ১৪৩.৭৭গ্রাম/দিন/জনপ্রতি]৭
১৯৯১-৯৫ সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারেরমৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল-নোমান ভাবলেন এই বর্ধিত প্রাণিসম্পদকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন এবং তার সাথে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচন করতে হলে মাঠ পর্যায়ে যুগোপযোগী ভেটেরিনারি ডাক্তার তথা প্রাণী চিকিৎসক দরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জনাব নোমান বিভিন্ন অংশীজনের সাথে সংলাপ চালিয়ে যান। তিনি একপর্যায়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ভেটেরিনারি সাইন্স অনুষদ ও প্রাণি (পশু) পালন অনুষদ এর শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করেন এবং বুঝানোর চেষ্টা করেন যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সমন্বিত ডিগ্রি চালুকরণ প্রয়োজন কিন্তু সেই উদ্যোগটি ফলপ্রসু হয়নি।সমন্বিত ডিগ্রির উপকারি প্রভাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, অতঃপর তিনি দুটি ভেটেরিনারি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যেখানে ভেটেরিনারি সাইন্স ও প্রাণি (পশু) পালন দুইটির সমন্বয়ে একটি ডিগ্রি প্রদান করা হবে শিক্ষার্থীদের।তারই ফলশ্রæতিতে, ১৯৯৩-৯৪ সালে সিলেট এবং চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি কলেজ প্রকল্প এর মাধ্যমে সমন্বিত ডিগ্রি বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে একই প্রকার সমন্বিত ডিগ্রিবহুল আরো ২টি ভেটেরিনারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় (বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজ ও দিনাজপুর ভেটেরিনারি কলেজ)। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি থেকেই সমন্বিত ভেটেরিনারি (কেবল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন পর্যন্ত দুইটি ভিন্ন ডিগ্রি দেয়া হয়) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। চট্টগ্রামে সমন্বিত ভেটেরিনারি প্রোগ্রামটিতে রয়েছে ৬৮% ভেটেরিনারি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোর্স, ২৫% প্রাণি উত্পাদন সম্পর্কিত কোর্স এবং ৯% বেসিক সাইন্স কোর্স। এছাড়া ১ বৎসর ব্যাপী ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম যা পরবর্তীতে নতুনভাবে সংযোজিত। ডিএফআইডি (ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউ.কে.) অর্থায়নে ‘হাইয়ার এডুকেশান লিংক প্রজেক্ট’ এর আওতায় রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ এবং লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকে) এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনের সহায়তায় দীর্ঘ সময় নিয়েপ্রফেসর ডঃ নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ-এর নেতৃত্বে ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামটি তৈরি করা হয়। সময়ের আবর্তে আপগ্রেডেশানের মাধ্যমে ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামটি দক্ষ ভেটেরিনারি ডাক্তার (প্রাণী চিকিৎসক) তৈরীতে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ (বর্তমানে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়) কর্তৃক তৈরীকৃত এই ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামটি বাংলাদেশের সকল ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে চালু হয়। এই প্রোগ্রামটির আওতায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল ভেটেরিনারি শিক্ষার্থী বিদেশে বিভিন্ন ভেটেরিনারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে (যেমন: তামিলনাড়– ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত; কন কন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড; টাফট্ কামিং স্কুল অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন, ইউএসএ; পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া) এক্সটার্নশীপ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ অতি অল্প সময়ের মধ্যে (১০ বৎসর) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)-এ রূপান্তরিত হয় ২০০৬ সালে। বিষয়টি অত্যন্ত বিষ্ময়কর অনেকের কাছে। এই রূপান্তরের পিছনে কিছু বিষয় একত্রে নিয়ামকরূপে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে- ১) সরকারি সুদৃষ্টি এবং পৃষ্ঠপোষকতা, ২) অন্যান্য অংশীজন (যেমন: খামারি, সিভিল সোসাইটি, ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর) প্রতিষ্ঠানটির সাথে নিবিড় যোগাযোগ, ৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও কার্যক্রম প্রকাশের ক্ষেত্রে মূলধারার আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকার সক্রিয় ভূমিকা, ৪) দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে নিবিড় সম্পর্ক, ৫) আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা, ৬) শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, এবং ৭) এই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ প্রফেসর ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথসমন্বিত নেতৃত্ব এবং ছাত্রছাত্রীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চমৎকার পারফরমেন্স।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রম রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা ছিলো তদান্তীন বাংলাদেশ সরকারের (২০০১-২০০৫) প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল-নোমান (২০০৪-২০০৫) এবং এই প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ (পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, সিভাসু)। এছাড়াও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (তদানীন্তন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী), ওসমান ফারুক (তদানীন্তন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা (২০০১-২০০৩), মো. এহসানুল হক মিলন (তদান্তীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী), আব্দুল করিম (সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব), ডা. নাজির আহম্মেদ (সাবেক মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর), ডা. কাজী আব্দুল ফাত্তাহ (সাবেক মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর), ইউসুফ চৌধুরী (চেয়ারম্যান, দৈনিক পূর্বকোণ ও সভাপতি ডেইরি এসোসিয়েশান, চট্টগ্রাম) এবং প্রফেসর এ.কে.এম সাইফুদ্দিন, সিভাসুÑ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ ব্যতিত পর্যায়ক্রমে আরও ৩টি অনুষদ (ফুড সাইন্স ও টেকনোলজি অনুষদ, ফিশারিজ অনুষদ এবং বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ), ৪টি গবেষণা ইন্সটিটিউট/সেন্টার (পোল্ট্রি রিসার্চ এবং ট্রেনিং সেন্টার, ওয়ান হেলথ্ ইনস্টিটিউট, কোস্টাল বায়োডাইভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট এবং ফুড সেইফটি এবং নিউট্রিশান ইনস্টিটিউট) এবং ৩টি টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল (মূল ক্যাম্পাস সংলগ্ন এস. এ. কাদেরি টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল, হাটহাজারি ক্যাম্পাস (একটি ভেটেরিনারি ক্লিনিক্যাল স্কিল ডেপেলপমেন্ট ল্যাবসহ একটি ভেটেরিনারি হাসপাতাল) এবং ঢাকা সিভাসু ক্যাম্পাস (বিশেষায়িত পেট হাসপাতাল) সংযোজিত হয়েছে। সিভাসুর ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং কিছু বিদেশি ভেটেরিনারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই হাসপাতালগুলিতে হাতে নাতে শিক্ষাগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এভাবে সিভাসু দেশ-বিদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষায় অবদান রেখে চলেছে।সিভাসুর পোল্ট্রি রিসার্চ এবং ট্রেনিং সেন্টার খামারি ও অন্যান্য অংশীজনদের প্রয়োজনীয় ল্যাব সার্ভিস এবং ট্রেনিং প্রদান করছে।এই সেন্টারটি জাতীয়ভাবে রেফারেল সেন্টার হিসেবে স্বীকৃত এবং কাজ করে যাচ্ছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এই সেন্টারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় গবেষণার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সহযোগীতা পেয়ে আসছে।
সিভাসুর ওয়ান হেলথ্ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে একমাত্র ইনস্টিটিউট যেখানে একস্বাস্থ্য (মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও সমাজ স্বাস্থ্য নিয়ে গড়ে উঠা সমন্বিত একস্বাস্থ্য) সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমপিএইচ), গবেষণা ডায়ালগ, একস্বাস্থ্য সচেতনতা প্রদান করা হয়। এই দেশে কোভিড-১৯, বার্ড ফ্লু এবং ডেঙ্গু এর মতো সমস্যা সমাধান করতে হলে একস্বাস্থ্য বিষয়ক পড়াশোনা, সচেতনতা, গবেষণা ইত্যাদি অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে তারেক রহমান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বিএনপি) ঘোষিত ৩১-দফা বাংলাদেশের পুনর্গঠনে চমত্কার রূপরেখা যেখানে একস্বাস্থ্য এজেন্ডা সন্নিবেশ করা অত্যাবশক। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক কর্মশালা ও কনফারেন্সে সিভাসু বেশমজবুত অবস্থানে আছে। এখানে বিষয়ভিত্তিক মৌলিক এবং এপলাইড এম. এস. এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিভাসু শিক্ষা ও গবেষার ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও সহযোগিতায় অত্যন্ত সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলি হলঃ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউকে; রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ, ইউকে; লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, ইউকে; ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউকে; সারে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউকে; টাফট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসএ; ব্রিসবেন বিশ্ববিদ্যালয়, অষ্ট্রেলিয়া; কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্ক; কন কন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড; পুত্রা বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া; তামিলনাড়– ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত। সিভাসুতে ‘টিচিং ও লার্নিং’ এর নতুন সংযোজন হল- প্রবলেম বেসড্ লার্নিং কোর্স এবং প্রফেশনালিজম ডেভেলপমেন্ট স্কিল কোর্স। প্রবলেম বেসড লার্নিং কোর্সটি অন্যান্য ভেটেরিনারি প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)। সিভাসুর গ্র্যাজুয়েটগণ দেশ-বিদেশে তাদের স্ব-স্ব কার্যক্ষেত্রে পারঙ্গমতার ছাপ রেখে চলেছে।সিভাসু সামগ্রিক বিবেচনায় একটি অনবদ্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে অভিভাবক তার ছেলেমেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চায়। শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যাপীঠে ভর্তি ও পড়াশোনা করে গৌরবান্বিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েট অংশীজনের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। উল্লেখ্য, মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এই প্রতিষ্ঠানে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলি আলোকপাত করার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল সঠিক পলিসি এবং সুযোগ্যতথা সমন্বিত নেতৃত্বে কিভাবে সমাজও দেশ- বিদেশে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারেএর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হলসিভাসু।রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সময়ে (১৯৭৭-৮১, ১৯৯১-৯৫, এবং ২০০১-০৫) এই রকম অনেক যুগান্তকারী পলিসি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যা বাংলাদেশকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে।১৯৯৯ সালে তারেক রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক, অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, ও সেবামূলক সংগঠন ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশান’ এর ধারণকৃত ¯েøাগান একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা এনে দেবে সচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা। তারেক রহমানের পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর স্মৃতি রক্ষার্থে এবং তাঁর গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের কাজ যেমন : সামাজিক বনায়ন, কৃষকদের জন্য উন্নত মানের বীজ উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, বীজতলা তৈরি করে দেয়া ও চারা বিতরণ, হাঁস-মুরগি, ছাগল ও মাছের পোনা বিতরণ, খামারিদের ফ্রি ভেটেরিনারি সেবা প্রদান, ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি। ভবিষ্যতে এই দলটি যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে তাহলে আশা করছি তাদের এই ভালোকাজগুলির সাথে আরো অনেক ইম্পেক্টফুল পলিসি এবং কাজ যুক্ত হবে যা বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করবে। পরিশেষে, আমরা সিভাসু পরিবার সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী ‘বেগম খালেদা জিয়া’ ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ‘আব্দুল্লাহ আল-নোমান’ এর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। সিভাসু যতোদিন থাকবে তাঁদের অবদান ততোদিন অ¤øান থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক ও পরিচালক, ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট,
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যালসাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয় (সিভাসু)