‘সিডিএ থেকে এখনও যায়নি ফ্যাসিবাদী সরকারের ভূত’

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তারা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার মর্ম ধারণ করছেন না, তাদের মাথা থেকে এখনও ফ্যাসিবাদী সরকারের ভূত যায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।
গতকাল শনিবার দুপুরে সিডিএ সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও সামগ্রিক কার্যক্রম বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ উপস্থিত ছিলেন। সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বর্ণনা করতে গিয়ে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শন করেন। শেখ হাসিনার সাথে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকেও দেখা যায়। আর এতেই উত্তেজিত হয়ে উঠেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা আপনারা এখনও ধারণ করছেন না। ফ্যাসিবাদ সরকারের ভূত এখনও মাথা থেকে যায়নি। কোথায় কী দেখাতে হবে, সেই বোধও আপনাদের হয়নি।
উপদেষ্টা বলেন, আজকের প্রোগ্রাম নিয়ে আপনাদের কোন প্রস্তুতি নেই। প্রকল্প উপস্থাপনে কী ছবি ও ভিডিও যাচ্ছে তা আগে থেকে দেখা দরকার ছিল।
এ সময় সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম সিডিএ’র পক্ষ থেকে উপদেষ্টাকে ‘সরি’ বলেন এবং একই সাথে ফ্যাসিবাদের ভূত মাথা থেকে সরিয়ে সিডিএতে জুলাই-আগস্টের স্পিরিট নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে মতবিনিময় সভায় সিডিএ’র পক্ষে প্রকল্প বিষয়ক তথ্য নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন করেন উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক আবু ঈসা আনসারী, চাক্তাই টু কালুরঘাট শীর্ষক রোড কাম বেড়িবাধ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক রাজীব দাশ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলো নিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কিউ এম শাহজালাল মজুমদার ও গৃহায়ণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল সরকার।
সিডিএ’র অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানায়, সিডিএতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বড় বড় প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া প্রকৌশলীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এর মধ্যে বেশকিছু প্রকল্পে ব্যাপক-দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ ‘ওপেন সিক্রেট’। চাক্তাই-কালুরঘাট বেড়িবাঁধ কাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক রাজীব দাশের বিরুদ্ধে এই প্রকল্পের টাকা নিয়ে ব্যাপক ‘নয়-ছয়’ করার অভিযোগ রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণ কাজ পর্যন্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। তিনি এ প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা টাকা বিদেশে পাচার করেছেন- এমন খবরও আছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সিডিএ’র মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প উপস্থাপনের পর গণপূর্ত সচিব হামিদুর রহমান জানতে চান, মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া রিপোর্ট কবে নাগাদ জমা হবে। একই সাথে মাস্টারপ্ল্যানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতও লিখিত আকারে থাকতে হবে বলে তিনি নির্দেশনা দেন।
অপরদিকে আউটার রিং রোড প্রকল্প এবং চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রকল্পটি কবে নাগাদ শেষ হবে, তা জানতে চাওয়া হয়। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, গণপূর্ত সচিব হামিদুর রহমান খানসহ সিডিএ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও গৃহায়ণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।