একই জায়গায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ফিডার রোড-২ ও চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছিল। এতে করে ঝুলে যেতে বসেছিল সিডিএ ও ওয়াসার দুই প্রকল্প। এ অবস্থায় জরুরি সমন্বয় সভায় বসেছেন ৫টি সেবা সংস্থার প্রধানরা। সে সভা থেকে তিনটি প্রস্তাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন সবাই। এই তিন প্রস্তাবের যথার্থতা নিয়ে কাজ করতে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের শক্তিশালী কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্তের উপর দুই সংস্থার প্রকল্পের পরবর্তী ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ওয়াসা ও সিডিএ’র বিরোধের জের ধরে গতকাল বুধবার সিডিএ হল রুমে সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। এই দুই সংস্থার বাইরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এম শাহজাহান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ সমন্বয় সভায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর তিনটি প্রস্তাবে একমত হন সভার সদস্যরা। তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে আছে, হালিশহরে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রস্তাবিত সুয়্যারেজ প্রকল্প বর্তমান এলাইনমেন্ট থেকে ২০ শতাংশ পূর্বের দিকে এনে সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের দিকে নিয়ে যাওয়া, সিডিএ’র ফিডার রোড-২ ওয়াসার প্রকল্পের উত্তর পাশে নিয়ে যাওয়া এবং ওয়াসার প্রকল্পের উপরে ওভারপাস হিসাবে ফিডার রোড স্থাপন করা। প্রস্তাবগুলোর উপর আরো বিশদ পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, বন্দর ও রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীকে। আগামী একমাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দুই প্রকল্পের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, সভায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাকে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিভাবে কি করতে হবে সে ব্যাপারে আমরা অনেক দিন ধরে চিন্তা-ভাবনা করে আসছি। সভাতেও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দিন দিন প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। এখন অসম্ভব বলে কিছু নেই। সুন্দরভাবে দুটি প্রকল্পই কিভাবে সম্পন্ন করা যায় সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।
একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা প্রতিবেদন দিতে পারবো। প্রয়োজন হলে পানি বিশেষজ্ঞদের এনে পরামর্শ করা হবে।
নগরীতে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য হালিশহর এলাকায় ১৯৬৩ সালে ১৬৩ একর ভূমি হুকুমদখল করেছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন পরেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জায়গাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এলাকার মানুষের হাঁটাচলার কারণে ক্রমে প্রকল্প এলাকার মাঝখানে একটি রাস্তা গড়ে উঠে। আরএস খতিয়ানে সেখানে কোনো রাস্তা না থাকলেও বিএস খতিয়ানে দেখানো হয় সে রাস্তা। সিডিএ’র আউটার রিং রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার পর রাস্তাটির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সিডিএ রাস্তাটিকে বড়পুল পর্যন্ত রিং রোডের ফিডার রোডে উন্নীত করতে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। একই সাথে রাস্তাটির পাশে একশ ফুট করে ভূমি সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা করতে কাউকে অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় সিডিএ। সিডিএ’র এ প্রকল্পের জন্য ওয়াসার জায়গা ছাড় দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তাদের ১৬৩ একর জায়গার একেবারে উত্তর পাশে রাস্তা করার সুযোগ দেয় সিডিএকে। কিন্তু সিডিএ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, ওয়াসাও সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি। ওয়াসার মতে, সুয়্যারেজ টিটমেন্ট প্ল্যান্টের লেআউট তৈরি করেছে মালেয়শিয়ান বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি কেপিআই ভুক্ত প্রকল্প। এ ধরনের কেপিআই ভুক্ত প্রকল্পের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করার কোনও সুযোগ নেই। অন্যদিকে সিডিএ’র দাবি, বর্তমান বিশ্বের পেক্ষাপটে ফিডার রোড সোজা হতে হবে, আঁকাবাঁকা হওয়ার সুযোগ নেই।
সমন্বয় সভার আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, সভায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। যেখানে পাঁচটি সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীদের রাখা হয়েছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদেরও সংযুক্ত রাখা হয়েছে। মূলত সভায় তিনটি প্রস্তাবনা এসেছে। এই তিন প্রস্তাবনার বাইরে তেমন কোনও অপশন আর নেই। এখন কমিটি পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।
উল্লেখ্য, সিডিএ ও ওয়াসার বিরোধের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প ঝুলে যেতে পারে। দুই সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম উপকৃত হবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত যেমনি হবে তেমনি পরিবেশ উপকৃত হবে। অন্যদিকে আউটার রিং রোডের ফিডার রোড-২ বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ব্যবসা বাণিজ্যের গতিশীলতা আসবে।