সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের বর্ষপূর্তি সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাক

5

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগর ও সিটি কর্পোরেশন চট্টগ্রাম। বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি ও বিপ্লবীদের তীর্থ স্থান হিসেবে এ শহরের ইতিহাস বরাবরই উজ্জ্বল। দেশের পুরনো পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যালের ইতিহাসে চট্টগ্রামের বয়স প্রায় ১৭০ বছর। চট্টগ্রাম সিটির ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এশিয়ার প্রাচীন ও বৃহৎ সমুদ্র পোতাশ্রয়ের কারণে এ চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছিল বিশ্ব রাজন্যবর্গের, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় সাধকদের কাছে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য স্থান। এখনও চট্টগ্রামের সেই আকর্ষণ, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা মোটেই কমেনি বরং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এ চট্টগ্রামের গুরুত্ব দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাজধানী ঢাকার পরে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনুসারে যতটুতু উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও নিরাপদ হওয়ার কথা সেই তুলনায় কিছুই হয়নি বলা যায়। তবে সরকারের উদ্যোগ যে একেবারে ছিলনা তা নয়, কিন্তু সঠিক নেতৃত্ব ও দক্ষ জনবলের সংকট এর জন্য অনেকাংশই দায়ি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের এক বছরের কর্মযজ্ঞ ও সফলতার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইচ্ছা শক্তি ও আন্তরিকতা থাকলে একটি পাহাড়সম সমস্যাকে সাধান করা যায়, যে কোন চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবেলা করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা যায়।
দেশের একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও জটিল সমিকরণের মধ্যে ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর। এর আগে ৩ নভেম্বর তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম নগরীর অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মেয়র ডা শাহাদাত হোসেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ নগরীকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেইফ সিটি হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি মনোনিবেশ করেন। সঠিক কর্মপরিকল্পনা, সঠিক ব্যক্তি বা নেতৃত্ব বাছাই ও সাংগঠনিক কাঠামোর সুবিন্যস্তকরণ ও নগরীর সকল সেবা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে তিনি তাঁর প্রতিশ্রæতির অনেক কিছু পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেই সাথে বাকি প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি দৈনিক পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম নগরবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তির আর্তনাদ করে আসছিল প্রায় তিন দশক ধরে। এ জন্য সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন্দর, ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও জলাবদ্ধতা নিরসনে যখন কোন কুলকিনারা করতে পারেনি, তখন ডা. শাহাদাত হোসেন তার সুচিন্তিত নির্দেশনা, টিম ওয়ার্ক ও সিডিএ’র সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাত্র এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার সংকট অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন আইডিয়া যুক্তকরণ, ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ, নালা-নর্দমা পরিষ্কার, রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্নকরণ, ফুটপাত ও চলাচলের পথের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ ও উচ্ছেদের মত কঠোর পদক্ষেপসমূহ নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন নিঃসন্দেহে। আমরা মেয়র ডা. শাহাদাতের বিশেষ কয়েকটি উদ্যোগের প্রশংসা না করে পারি না, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ। এ সংস্থাটির গৌরবের ইতিহাস রচিত হয়েছে শিক্ষা দিয়ে এরপর স্বাস্থ্য। প্রায় একশত বছর আগে নুর আহমদ চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম পৌরসভার অধিনে শিক্ষা বিভাগ চালু করেন। তিনি তাঁর ৩৩ বছর পৌর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে এ শহরে বালক ও বালিকা মিলে প্রায় ২৮ টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয প্রতিষ্ঠা করেন। যার ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাইমারি ও কিন্ডারগার্টেন মিলে ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অর্ধ লক্ষের অধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে আসছে । প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-কর্মচারি কর্মরত আছেন। সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগটা ছিল তিনি শিক্ষা বিভাগের স্কুল ও কলেজের ২৫২ জন শিক্ষক, স্বাস্থ্য বিভাগের ৭৩ জন চিকিৎসক ও কর্মচারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আরো প্রায় শতাধিক কর্মচারির চাকরি স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রদান করেন।
মরিচিকাময় একটি প্রশাসনকে জাগিয়ে তোলা এবং অসাধ্য সাধনের যাদুকরি কৌশলে ডা. শাহাদাত নিজেকে জনতার মেয়র হিসেবে যথার্থই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তাতে কোন ভুল নেই। দৈনিক পূর্বদেশে তাঁর প্রকাশিত সাক্ষাতকারের প্রনিধানযোগ্য অংশ থেকে তুলে ধরে বলতে চাই, ‘সত্যিকারের উন্নয়ন এবং তার সফলতা পেতে হলে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’ দরকার। এটা হলে-শহরের সবগুলো সেবাসংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করার আইনগত কর্তৃত্ব পাওয়া যাবে, তাতে উন্নয়ন-অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে’। এ দাবি এ যাবৎকালের সকল মেয়র করে আসছেন, এটি একটি নগরীর জন্য অপরিহার্য্য বটে। সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বৃহৎ সিটি কর্পোরেশনের জন্য ‘সিটি গভর্ণমেন্ট’ প্রস্তাবনাটি বিবেচনায় আনবে-এমনটি প্রত্যাশা করি। বছর পূর্তিতে পূর্বদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। আপনার সফলতা ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।