সিইউএফএলের কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে যাত্রা

1

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প উৎপাদনে যাওয়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। তবে প্রকল্পের মূল গ্রাহক চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটির কমিশনিং (ট্রায়াল রান) বেশ কয়েকবার সম্পন্ন হয়েছে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগও দেওয়া হয়েছে। তবে সিইউএফএলের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় প্রকল্পটি এখনও উৎপাদনে যেতে পারছে না। তবে চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ শিগগিরই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা প্রকল্পটির জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার লক্ষ্য রয়েছে। এ পানি বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, পটিয়া উপজেলা এবং কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিইউএফএল ও কাফকো শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যা শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ৮০% পানি শিল্পাঞ্চলে এবং ২০% আবাসিক এলাকায় যাবে। প্রকল্পের মূল গ্রাহক হিসাবে বিবেচনায় ছিল সিইউএফএল, কাফকো ও কেইপিজেড। এর মধ্যে সিইউএফএল এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্টানটি দৈনিক দেড় কোটি লিটার পানি ব্যবহার করতো। কেইপিজেড এখনো পানি নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ট্রায়াল চলছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল এবং ৯০০ জন আবাসিক গ্রাহককে পানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সিইউএফএল বন্ধ থাকায় এবং কাফকো নিজস্ব সমস্যার কারণে পানি নিচ্ছে না। চায়না ইকোনমিক জোন কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। আমরা প্রকল্পটি চালুর অপেক্ষায় আছি।
প্রকল্পটির মাধ্যমে ছোট-বড় ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে। পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে কমিশনিং (ট্রায়াল রান) চলছে। এটি চালু হলে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে পানি সংযোগ দেওয়া হবে। শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ এবং আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে ভ‚মি সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পটি তিন বছর আটকে ছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মাধ্যমে পটিয়া-আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চলে পানি সংকট দূর করার লক্ষ্য রয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
প্রকল্পের মূল গ্রাহক হিসাবে কাফকো, সিইউএফএল, ড্যাপ, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরা হয়েছিল। তবে সংযোগ দেওয়ার জন্য চিঠি দিলে সিইউএফএল ও ড্যাপ ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে গ্যাস সংকটের কারণে সিইউএফএল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরার ভান্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে এ পানি শোধনাগার। সিইউএফএল ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনিশ্চয়তা প্রকল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ শুরুর সম্ভাবনা প্রকল্পটির জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। প্রকল্পটি চালু হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পানি সংকট দূর হবে।