সামান্য বিষয়ে তুলকালাম কান্ডের মানে নেই

68

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি সামান্য বিষয় উল্লেখ করে তা নিয়ে তুলকালাম কান্ড না করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নগরের কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি প্রয়াত এম জানে আলম দোভাষের স্মরণসভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, এসবের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এই সামান্য বিষয় নিয়ে তুলকালাম কান্ড করার কোনো মানে হয় না। আমি মনে করি এটা যতটুকু হয়েছে, ততটুকুর মধ্যেই মিটমাট করে ফেলা উচিত। এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা ভালো হবে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং নগর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন উপস্থিত থাকলেও এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে মরহুম জানে আলম দোভাষের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পরিশুদ্ধ ও ত্যাগী রাজীনীতিকরাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য সোনার বাংলা বাস্তবায়নের সহায়ক শক্তি। ত্যাগী নেতারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাবে। পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য আমাদের প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে অগ্রবর্তী বাহিনীর ভ‚মিকা পালন করতে হবে। তিনি পরিশুদ্ধ প্রয়াত রাজনীতিক ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর জানে আলম দোভাষের পদাঙ্ক অনুসরণের আহব্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, জানে আলম দোভাষ দল ও দেশের দুঃসময়ের কান্ডারী। তার পারিবারিক বাসভবনটি ছিল দুঃসময় উত্তরণের সাহসী ও জন্য নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শক্তি সঞ্চেয়র একটি নির্ভরশীল ঠিকানা। জানে আলম দোভাষ ছিলেন এ ঠিকানার মূল চালিকাশক্তি। এখানে নিয়মিত এম.এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম.এ হান্নান, ইসহাক মিয়া, আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী, এম.এ মান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সার, এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকেই আসত।
জানে আলম দোভাষের স্মৃতিচারণ করে ইঞ্জি. মোশাররফ বলেন, ধনাঢ্য ও অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি নিরহঙ্কর ছিলেন। ভদ্রতা, নম্রতা ও বিনয় ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট। তিনি খুব সহজে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারতেন। এমন একটি মানুষকে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসা দিয়ে নেতৃত্বের আসনে উপস্থাপিত করেছিলেন। তাকে ৭৪ সালে জহুর আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর শূন্য সংসদীয় আসনে জোর করেই দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কারণ তখন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যেভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছিল তা ছিন্ন করতে জানে আলম দোভাষই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভরসা।
সভার প্রধান বক্তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও খ্যাতিমান সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, জানে আলম দোভাষ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বনেদি পরিবারের সন্তান হয়েও গণমানুষের প্রতি ভালোবাসায় নিবেদিত ছিলেন। তার পূর্বপুরুষ আব্দুল হক দোভাষ বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ১৯৩০ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু চট্টগ্রাম এলে তাকে তিনি সংবর্ধিত করেছিলেন। জানে আলম দোভাষের রাজনৈতিক শিক্ষা দীক্ষা অর্জিত হয় পারিবারিক ঐতিহ্য সূত্রেই। তাই জানে আলম দোভাষ সত্যিকার অর্থেই একজন স্বার্থক গণনায়ক।
জানে আলম দোভাষের একান্ত ঘনিষ্ঠজন ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা এম.এ গণি বলেন, জানে আলম দোভাষ আমার নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশী হলেও তার সঙ্গে রাজনৈতিক সর্ম্পকটিই ছিল চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় তার বাসভবনে আমরা প্রথম শলা পরামর্শ করি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এ বাসভবন থেকেই নেওয়া হতো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন এম.পি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মশুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই অভিযান শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামসহ সারাদেশব্যাপী পরিচালিত হওয়া উচিত। তাহলেই জাতির জন্য কল্যাণময় বার্তা বয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মরহুম জানে আলম দোভাষের ছেলে ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম. জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাসভবনে বাবার সাথে চট্টগ্রামের খ্যাতিমান রাজনীতিকদের নিয়মিত ওঠাবসা প্রত্যক্ষ করেছি। আমার বাবার সান্নিধ্যে থেকে সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সুকীর্তিগুলো আমার রাজনীতিক সত্তাকে বিকশিত করেছে। আমি আমার বাবার রাজনৈতিক বিশ্বাস, আদর্শ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার আদর্শিক চেতনাকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শনের একজন সেবক হতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জানে আলম দোভাষ ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী ঘরানার একজন অভিভাবক। তিনি দুঃসময়ে যে সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছিলেন তা ছিল জেগে ওঠার কালজয়ী মন্ত্রণা। আমাদেরকে এ ধরণের মন্ত্রণা অর্জনের জন্য জানে আলম দোভাষের মতই পরীক্ষিত নেতাদের কাছে শরনাপন্ন হতে হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক্ব বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, উপদেষ্টা শফর আলী, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, আইন সম্পাদক এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর, কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন কুমার মজুমদার, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহব্বায়ক কে.বি.এম শাহজাহান, মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শামসের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, জালাল উদ্দিন ইকবাল, জোবাইরা নার্গিস খান, আবদুল আহাদ, আবু তাহের, শহিদুল আলম প্রমুখ।
সভার শুরুতে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা হারুনুর রশিদ।