সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে ৯৪% পথশিশু

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশের ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ পথশিশু সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে বলে কারিতাস বাংলাদেশের এক জরিপে উঠে এসেছে। তাছাড়া বস্তি এলাকার ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার এ সুবিধার বাইরে রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পথশিশু ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত জরিপের ফল তুলে ধরেন কারিতাস বাংলাদেশের অ্যাডভোরেসি অফিসার রবিউল আলম।
তিনি বলেন, পথে বেড়ে ওঠা শিশুদের ৫৮ শতাংশেরই জন্ম সনদ নেই। ফলে তারা শিক্ষার অধিকারসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
জরিপে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং রাজশাহী শহরের পথশিশু ও বস্তি এলাকায় বসবাসরত পরিবারকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ জরিপে অংশ নেওয়া পথশিশুদের ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ বর্তমানে শিক্ষার বাইরে রয়েছে।
জরিপ বলছে, বস্তি এলাকায় বসবাসরত ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারের আয় সাড়ে ১২ হাজার টাকার নিচে। এসব পরিবারের ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ শিশু পথশিশু হয়ে যায়। বস্তি এলাকায় বসবাসরত ৩১ দশমিক ১ শতাংশ পরিবারের কোনো শিশুর জন্মসনদ নেই। এ পরিস্থিতি উত্তরণে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন কারিতাস বাংলাদেশের এসডব্লিউভিসি শাখার ইনচার্জ চন্দ্র মনি চাকমা।
সুপারিশ সমূহ হলো-১. পিতামাতাহীন শিশুদের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা ওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্পেইন চালিয়ে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করা। ২. শিশু জন্মের পরপরই হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা চালু করা। ৩. পথশিশুদের রাস্তা থেকে ফেরাতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করা; যার মধ্যে শর্তযুক্ত ভাতা রাখা- যাতে শিশুর জীবনমান উন্নয়নে পরিবার ভূমিকা রাখে। ৪. শিশুশ্রম বন্ধ এবং শিশুশ্রম ও অন্যান্য কারণে ঝরে পড়া শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ৫. পথশিশুদের শিক্ষা নেওয়ার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা। ৬. দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ বাস্তবসম্মতভাবে বাড়ানো ও আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা।
বেসরকারি সংস্থার প্রতি সুপারিশ- ১. জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা, শিশুশ্রমের ক্ষতিকর দিক এবং শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে অভিভাবক ও জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ২. পথশিশু ও ঝরে পড়া শিশুদের জন্য খাপ খাওয়ানো উপযোগী বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করা। ৩. মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে শিশুবিষয়ক সমস্যার বাস্তবচিত্র তুলে ধরা ও সরকারকে নীতিমালায় প্রভাবিত করার জন্য প্রমানভিত্তিক অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম চালানো।
অনুষ্ঠানে সংস্থার পরিচালক (কর্মসূচি) দাউদ জীবন দাশ বলেন, সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে অল্পসংখ্যক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছেন, তারা যে ভাতা পাচ্ছেন তা খুবই নগণ্য। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক ৫০০-৬৫০ টাকা ভাতা কখনো বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী নয়।
আমরা যদি এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে যাই, তাহলে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা অনেকাংশেই পিছিয়ে যাব। তাই তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে অবিলম্বে সরকারসহ আমাদের সবার নজর দিতে হবে।