মিঞা জামশেদ উদ্দীন
রোদে ভিটামিন-ডি আছে। ভোর-সকালে রোদে শরীর তাতানোর পাশাপাশি ভিটামিন-ডি গ্রহণে আপত্তি থাকতে পারে না। ভিটামিন- ডি গ্রহণে শরীরে কোষ ও জমাটবাঁধা রক্তের সঞ্চালন বাড়ে। পাশাপাশি হাড়ের ক্ষয়রোধও হয়। এটি সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা বলা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ লোকজন এসবের কোন ধারধারে না। তারা স্বল্প আহারে দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করতে পারে এটিও ভিটামিন-‘ডি’ গ্রহণের অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। তারা হয়তো তা জানেন না।
যাক, যেকারণে এ অবতারণা। শীতের কড়া রোদে শরীর তাতাতে গিয়ে ভেঁজামোজা শুকিয়ে নেয়ার তাড়া আসে। অবশ্য এটি করতে গিয়ে একটি গল্পের জন্ম হয় আতুড়ঘরে। অনেকটা এ অবতারণা বা কাহিনি। তবে বেশ চমকপ্রদও বটে; যা কী-না দায় চাপানো হয় কুকুর ছানার ঘাড়ে। যদিওবা আমি সেভাবে নিইনি। আমি জানি চার পায়ের চেয়ে দু’পায়ের কুকুরের ভয়ংকরতা ! ঠিকই এ প্রজাতির একদল কুকুর পিছু নিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা যতসব বিরক্তিকর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে একের পর এক। এসব যে মাবলিক বিষয় তা নিমিষেই বুঝা যায়। দিনশেষে এর ফলাফলও হয় অন্তসারশূন্য।
অবশ্য শীতকালে স্যু জুতোর মোজা একদিনের বেশি পায়ে পরা যায় না। পরলেও হাঁটাচলা অনেকটা আরামদায়ক নয়। আবার পাশাপাশি বিরক্তিকর ঘটনাও আছে সর্বত্র। এখানে আবার কেমন বিরক্তিকর ঘটনা থাকতে পারে? সেটি হলো মোজার বীভৎস দুর্গন্ধ ছড়ানো। এসব অবতারণা না করাই ভালো। একেবারেই অসহনীয় পরিবেশ। অফিস-আদালতে মোজা পরিহিত অবস্থায় যাওয়া মানেই নেহাৎ বোকামি। কিন্তু মোজা না পরাও অসম্ভব বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেটিও স্বীকার করতে হয়। আর এর অর্থ দাঁড়ায় মানে মানে ফেরা। অবশ্য অনেকের এমন বীভৎস দুর্গন্ধ ছড়ায় না। যাদের দুর্গন্ধ ছড়ায় তারা রাতে মোজা ধোত করে নিলে হয়। অথবা একাধিক মোজাজোড়া রাখলে পাল্টে পাল্টে পরতে পারে। অর্থাৎ একদিনের বেশি কোনোভাবেই মোজা পরা যাবে না। ঠিক ওইসূত্র ধরে জীবন চলা। রাতে মোজাজোড়া ধুয়ে নিই এবং রাতভর জল শুকাতে থাকে। সকালেও একটু একটু ভেজা-তসলা থেকে যায়। আরেকটু রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো; এতে হাঁটাচলাতে অস্থিরতা থাকে না। মোজাজোড়া শোকাচ্ছিল।
আর এজন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তারপর ঘর থেকে বের হওয়া বা যাত্রার প্রস্তুতি। কিন্তু এ ঘটনা থামিয়ে দিল। ফিরে দেখি শুকাতে দেয়া মোজা পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে এদিক- সেদিক খুঁজি। অবশ্য অদূরে ঝুপঝাড়ে একটির খোঁজ মিলে, অন্যটির আর খোঁজ মিলেনি – মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। যদিওবা একজন অবুঝ কুকুর ছানার ওপর দায় চাপালো! কুকুর ছানা নাকি মুখে করে নিয়ে গেছে! কিন্তু তা ছিল অবিশ্বাস্য ও অগ্রহণযোগ্য। কুকুর ছানা কেনোবা তা নিতে যাবে? তবে পুরোপুরি সন্দেহের আঙুল দু-পায়ের কুকুরদের দিকে!
এ দু-পায়ের কুকুর বড়ই ভয়ংকর; এরা পারেনা হেনকোনে অপকর্মে নেই! তাদের লাজলজ্জাও লোপ পেয়েছে। নিজেরা অপরাধ সংঘটিত করে নিরীহ প্রাণী কুকুর ছানার উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। এভাবে আর কতকাল লোকচুরি খেলা চলবে তাদের ?শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়? আবার বালির তাজমহলও কি দীর্ঘ স্থায়ী হয়?
তবে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাও উদ্বেগ বাড়ায়। স্বাধীনতা ৫৪ বছর পরও দেশের আত্মসামাজিকতা অবস্থা স্বাভাবিক ফিরে আসেনি। মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে কোনোটাই স্থায়ীত্বতা পায় না। এ ক্ষেত্রে যে নৈরাশ ভাবনা জাগে, এটিও তার একটি। মানুষ রাষ্ট্রের পরিপূরক, সেটি নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
দৃষ্টান্তমূলক একটি ঘটনা বলতে পারি। সীতাকুন্ডের মুরাদপুর মৌজার ২৮৩৫ দাগ নাম্বারে জমিটি খাস। এটা প্রকৃতি- কৃষি জমি। এখানে মুরশী ওয়ারিশি দখলে কৃষি চাষবাস হয়ে আসছে। এতে কারো আপত্তি ছিল না। এখন ওই খাস জমি বিক্র করা বা ক্রয় করেছে বলে দাবি করলে তা কি ধূপে জলে ঠিকবে। এটাযে একটা বাজে প্রবণতা বা সাগরে ঢিল ছুড়ার সামিল, তা বুঝতে কেন কষ্ট হচ্ছে। এখানে স্থায়ী স্থাপনা দেয়াল ঘেরা দেয়া! অবশ্য সেটা হয়নি। সীতাকুন্ডের এ্যাসিল্যান্ড আব্দুল আল মামুন নিশেষজ্ঞা প্রদান করেন। এরপর কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। হয়তো আবারও ফন্দি-ফিকির করচ্ছে হেন করেগা তেন করেগা। এসব কোনোটা ভালো কাজ না; সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং আইনকানুন অমান্য করার প্রবণতা জাগে। একজন সচেতন ব্যক্তি কখনো তা সমর্থন করতে পারে না।
যেমনটা চট্টগ্রাম কোর্টের বিচারাধীন ১ হাজার ৯১১টি মামলার নথিপত্র উধাও হয়ে যাওয়া। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসে বিচার বিভাগ কি করে ঘটলো এ ঘটনা। গত ৫ জানুয়ারি ২০২৫ইং চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডির সূত্র ধরে ঘটনাটি জানাজানি হয়। জিডিটি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রতিকিউটর মো. মফিজুর রহমান। সেখানে ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট রক্ষিত ছিল। বিচার বিভাগের এ ঘটনা জনমনে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কথা হলো, মামলা গুলো অসঙ্গতিপূর্ণ হলে মহামান্য আদালত তা খারিজ বা বাতিল করে দিতে পারে। সঙ্গে মামলার সকল নথিপত্র ভস্মীভূত করার নির্দেশ দিতে পারে। অন্তত আরো কিছুদিন অপেক্ষা কি করা যেতো না। আইন-আদালতের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধাবোধ হারাতে বসেছে। তা কখনো সহনীয় পর্যায়ে নয়। তবে আদালত পাড়ায় গড়ে উঠেছে টাউট-বাটপারদের আখড়া।
এরাও আদালত সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে একাট্টা হয়ে এসব নানা অপকর্মে চালিয়ে আসছে। তৃতীয়-চতুর্থসহ আরো যারা এসব সংস্পর্শে আছে। তারা প্রতিনিয়ত মামলার বাদী বা প্রতিকার প্রার্থীদের হয়রানি করার বড় ধরণের কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। যেকোনো সময়ে তাদের হাতে হেনস্থা হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। অনেকে ভয়ে মুখ খোলতে সাহত পায় না। নথিপত্র গায়েরের পাশাপাশি মামলার রায়ের আদেশ কপি- নকল গাবেব করার ঘটনা আছে অহরহ। এর সবই একই স্থানের এবং একশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এরা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে, নানা রঙে নানা বর্ণে রূপ ধারণা করে। খতিয়ে দেখা হোক, একজন পেশকার বা অন্যান্য স্টাফদের অর্জিত সম্পদের পরিমাণ। তাহলে বের হয়ে আসবে থলের বিড়াল। এবং তাদের পেশাগত সততা ও নিষ্ঠা কত ইঞ্চি আছে।
অতিবাহিত হলো ৫ মাস, ৫ আগষ্ট বা জুলাই বিপ্লবের। এরমধ্যেও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক ফিরে আসেনি। আর ফিরে না আসায় এক ধরনের ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে সর্বত্র। বিশেষ করে ৫ আগষ্টের বিপ্লবের সাথে যাঁরা সংশ্লিষ্ট আছে, তাঁরা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে প্রশাসনের প্রতি। সেখানে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। যারা রক্ষক তারাই হয়ে গেল ভক্ষক। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? চট্টগ্রামে দায়িত্বরত ওসি নেজাম উদ্দিন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা তারই একটি বহিঃপ্রকাশ। একদিকে তাকে লাঞ্ছিত করা, অন্যদিকে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি লাইফে প্রচার করা বা ছড়িয়ে দেয়া। অবশ্য এ ঘটনায় চট্টগ্রামের চকবাজার স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই সদস্য শহিদুল ইসলাম শহিদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের দপ্তর সম্পাদক আবু বক্কর সই করা চিঠিতে এ বহিষ্কার আদেশ নিশ্চিত করা হয়। তাতে বলা হয় দলীয় শৃঙ্খলা ফিরে আনতে এ বহিষ্কার আদেশ দেয়া হয়। তবে শহিদুল ইসলাম শহিদের বহিষ্কার আদেশে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। এটিও অপরাধ সংঘটিত করার তাৎক্ষণিক প্রতিকার। সঙ্গে অপর যারা এ ঘটনা সংঘটিত করেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত নয় কি। ফুটেজতো ওই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়।
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ইং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সম্মুখে দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। অবশ্য এ ঘটনা কতটুকু প্রবাহিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতে থানায় থানায় পুলিশের নিষ্ক্রিয় অবস্থা দেখা যায়। তারা পাবলিক কনসালটেন্টে যেতে একেবারে অনীহা। সেখানে এটি যা হলো, মরার ওপর খরার গা। সারা দেশে পুলিশ আবারও নড়েচড়ে বসেছে। কাঁচা বাজার নিয়ন্ত্রণ নেই। ঝিনাইদহের শৈলকূপায় কৃষকের পেঁয়াজ ফলন বাম্পার হয়েছে। তবে একটি সহনশীল বাজার থাকা উচিত। খুচরো বাজারে দাম এখনো কমেনি। সীতাকুন্ড বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্র হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। রিক্সাভ্যান করে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রয় করতে দেখা যায়। শহিদ নামের এ বিক্রেতা জানান, দেশীয় পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। তাই দাম কমেনি। কিন্তু কৃষকদের বেলায় দ্বৈত নীতি কেন? তারাতো তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। টমেটোর এখনো ৫০ টাকা, শিম ৫৫-৬০ টাকা কেজি। তবে বেগুন, মুলা ও কপির দাম কমেছে। শাক-পেঁয়াজ ডগার দামও কমেছে। চাউল অপরিবর্তিত রয়েছে। সর্বনিম্ন মানের ৬২-৬৫ টাকা কেজি।
এবার আশার কথা শুনাযাক প্রবাসী বন্ধু আজম চৌধুরী। তিনি একজন সঙ্গিতাজ্ঞ। পাশাপাশি একজন সুরকারও। তার সুরকরা লিরিকে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা। সৈয়দ আব্দুল হাদি গেছেন, ‘মানুষের অন্তরে খোদা মিলে’, সুবীর নন্দির কণ্ঠে ‘দোহাই বন্ধু ’, রঞ্জন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘যদি কেউ জীবনে আপন হতো’, তপন চৌধুরীর কণ্ঠে ‘নৌকা বৈঠা-মাঝি কান্দে’, চৈতী মুৎসুদ্দী কণ্ঠে “ঝরে যায় মন” ও শিল্পী স্বরূপ বড়ুয়ার কণ্ঠে ‘মানুষের মন’।
মুলত আজম চৌধুরীর নব্বই দশকে শিল্পী। বলতে হয় রবি চৌধুরী, আলমগীর আলাউদ্দীন ও সাইফুদ্দিনদের পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পী তিনি। আজম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে ঈদগাহ্। ০৪/০১/২০২৫ ইং আবারও দুবাইয়ে পাড়ি জমালেন। তাকে বিদায় জানাতে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট যাওয়া। বন্ধুর হাতে ছিল শুধু দুটি তবলা। আমাদের সহযোগিতায় তার ইনুস্টেমেন্ট- তবলা দুটি কস্টটেপ দিয়ে প্যাকেজ করে দেওয়া। তার আগে কাজীর দেউড়ীতে শস্যভাটা দিয়ে মেলা চিতল খাওয়া। এয়ারপোর্টেও কপি খাওয়া হলো। সঙ্গে ছিলেন গীতিকার ও বিনোদন সাংবাদিক আশিক বন্ধু। সল্পসময়ে আজম চৌধুরীর যা জানালেন, তিনি দুবাইয়ে কোনো কোম্পানির আন্ডারে চাকরি করেন না। শুধু সাংস্কৃতিক ইভেন্টে, সঙ্গিত পরিবেশ করেই তার যতসামান্য আয়রোজগার। আর এটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। তারপরও তারা দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাদের অর্জিত বিদেশি মুদ্রায় দেশের এই হুমকিধামকি!
অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারী চীন ও জাপানকে আহŸান জানালেন। ০৬/০১/২০২৫ ইং বেপজা’র ২০২৩ -২৪ইং অর্থ বছরের বার্ষিকী প্রতিবেদন প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহŸান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ( বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
লেখক : কবি, গবেষক ও কলামিস্ট