নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা এবং জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ আত্মসাতের তথ্য পেয়েছেন সংস্থাটি।
এর আগে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দু’জনই দুদক থেকে অব্যাহতি পান। তবে গণঅভ‚্যত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর নতুন করে আবারও দুদকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি প্রভাবশালী এই সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কমিশনের নিকট আবেদন করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২। এমনকি তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজুর রহমান মিতা ২০১৪ সালে স›দ্বীপের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ছিল ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৮০৫ টাকা। সেই আয় ১০ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা। আর অস্থাবর সম্পদ ২০১৪ সালের তুলনায় ১৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ১২৫ কোটি টাকায় জেটি নির্মাণ দুর্নীতিতেও মাহফুজুর রহমান মিতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতেরও তথ্য পেয়েছে দুদক। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফায় এমপি হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৯৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে ১০ শতাংশ কমিশন আদায় করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। স›দ্বীপে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন দেলোয়ার খাঁ সড়ক নির্মাণের ৭২ কোটি টাকার টেন্ডারেও অনিয়ম করেছেন মিতা।
তার স্ত্রী মাহমুদা মাহফুজের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩০ টাকা। যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৮ টাকা। তাদের নামে পূর্বাচলে প্লট, মতিঝিলে ৫ কাঠায় জায়গার উপর ভবন, দিয়া বাড়িতে ৫ কাঠার প্লটসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলেও তথ্য পেয়েছে দুদক।
অপরদিকে চট্টগ্রামের পটিয়ার সাবেক এমপি এবং আওয়ামী লীগের সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছেন দুদক। তার বিরুদ্ধে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি প্রাক্কলন তৈরি করে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলের উপর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ থাকার কথা জানিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সামশুল হক চৌধুরীসহ তার পরিবারের সদস্যরা যখন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তারা ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের মাধ্যমে প্রচুর অর্থের মালিক হন। পটিয়ার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা, সরকারি জমি দখল, মাদক ব্যবসা এবং কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অর্জন করেছেন সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবার। তার ছেলে শারুন, ছোট ভাই নবাব ও মহব্বত, ভাগিনা লোকমান, ও পিএস এজাজসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা সবসময় তার সাথে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া ২০১৯ সালে এক পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেছিলেন, সামশুল হক চৌধুরী প্রতিদিন চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাব থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করতেন এবং ৫ বছরে তার আয় ছিল প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। এসব আয় মূলত ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম থেকে এসেছিলো। সেসময় দুদকে থাকা অভিযোগনামায় নানা তথ্য উপাত্ত থাকা সত্তে¡ও ২০২৩ সালের ৮ মে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তিনি।