সাবেক এমপি মোস্তাফিজ ও তাঁর স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

5

বাঁশখালী প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এই আদেশ দেন। গতকাল বুধবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশন থেকে সিদ্ধান্তের পর দুদক উপপরিচালক মুর্তুজা-আল-মাহমুদের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল কাদের ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর চলতি সপ্তাহ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫৪ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে জাতীয় সংসদ, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিস, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, রাজউক, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠান, ৭৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৪৫টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা। সাবেক এই এমপির নিজ নামে একটি টয়োটা প্রাডো জিপ, যার মূল্য ৩৭ লাখ ২০ হাজার ও একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রোজার স্টেশন ওয়াগন, যার মূল্য ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত চার একর জমি, নিজ নামে বরাদ্দকৃত রাজউকের তিন কাঠার প্লট, ১৪ গন্ডা অকৃষি জমি, চার কাঠার প্লট ও চকবাজার সুপার মার্কেটে দোকান রয়েছে। স্ত্রীর নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট বাড়ি ও ঢাকার কাফরুলে ১৮৭২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঁশখালীর সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বর্তমানে ৭টি মামলা হয়েছে। তাঁর মেয়ে প্রিয়াতার নামেও হয়েছে মামলা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দেশ ত্যাগের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানান, তিনি দেশেই আছেন, চট্টগ্রামেই আছেন। গ্রেপ্তার ও জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন। তার আগের মোবাইল, ইমু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক বন্ধ রাখলেও নতুন নাম্বার ব্যবহার করছেন। যোগাযোগ রাখছেন তার ঘনিষ্ঠদের সাথে।
বাঁশখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রিয়াতা এবং স্ত্রী শাহীন আক্তারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ছাড়াও ফৌজদারি আইনে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে।