সাধারণ মানুষের দাবি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতায় আনতে হবে

1

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে যোগদান করার অন্যতম প্রধান কারণ ১৭ বছরে দ্রব্যমূল্য যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তা নিয়ন্ত্রণের আশায়। ব্যবসায়ীরা দেশের মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছেমতো তাদের আখের গুছিয়েছে। দ্রব্য পরিবহনে বিশেষ দলীয় লোকদের চাঁদা, পুলিশের চাঁদা, গুদামজাতকারীদের কারসাজি, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সরকারি সংশ্লিষ্টদের উপরিপাওনা ইত্যাদি কর্মকান্ডে দেশের ক্রেতাসাধারণ অসহায় হয়ে পড়েছিল। অকারণে কোন কোন দ্রব্যের দাম বারবার বেড়েছে কিন্তু কোনভাবেই দাম কমাতে পারেনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বরং ক্রেতাসাধারণকে বলির পাঁঠা করে ব্যবসায়িদের সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছিল সরকারি মহল। এমতাবস্থায় জনমনে স্বৈরাচারী সরকারের প্রতি ক্ষোভ বেড়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে সরকারের পদত্যাগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জনগণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। কে ক্ষমতায় আসছে , কারা কোন কোন সুবিধা ভোগ করছে তা সাধারণ জনগণ চিন্তা করে না। জনগণ খেয়েপরে বাঁচতে চায়। বাজার ব্যবস্থা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং ব্যবসায়ীদের অনিয়ম ,দুর্নীতি, অবৈধ গুদামজাতকরণ, কৃত্রিম উপায়ে কারসাজির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অপকৌশল, সিন্ডিকেট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণই সাধারণ মানুষ এসরকারের কাছে আশা করছে। এসরকার রাজনৈতিক সরকার নয়। সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবী বাজার ব্যবস্থায় নিয়ম ফিরিয়ে আনা এসরকারের পক্ষেই সম্ভব বলে মনে করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ।
শাকসব্জী,তরিতরকারী, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, মুরগিসহ সকল দ্রব্যের দাম অস্থিতিশীল ভাবে চলছে। তার উপর দেশি-বিদেশি ফলের বাজারও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিদেশি ফল এখন বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে মধ্যবিত্তদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তবে আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের দাবি, মৌসুম শেষ, ডলারের দামবৃদ্ধি এবং বন্দরের ডিউটি ফি- এ তিন কারণে ফলের দাম এখন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টদের থেকে এ সব জানা যায়। সবই পুরাতন অজুহাত বলছে সংশ্লিষ্টরা। এখন তো ডলারের রেট কমেছে, কই তার প্রভাব তো পড়েনি। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলে দাম বাড়িয়ে দেন। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ফলের দাম কমে, তখন দাম কমান না। যেমন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কমিয়েছে। তবে সেগুলো কাগজে-কলমে থেকে গেলেও বাস্তবে তার প্রভাব নেই।
প্রশাসনের যথাযথ বাজার মনিটরিং হচ্ছে না। পরিবেশ উপদেষ্টার প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কথা বলার পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু জনগণের কি সমস্যা, তা নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করেনি। অথচ জনগণের পক্ষ নিয়ে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা উচিত, উপদেষ্টাকে খুশি করার জন্য নয়।
ফল ব্যবসায়ীদেরসহ সকল ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করার এখনই সময়। এক মাসের ব্যবধানে বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া প্রত্যেকটি ফলের দাম কেজিতে পঞ্চাশ থেকে দেড় শ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এতে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে আপেল, কমলা, আঙুর ও আনারের মতো বিদেশি ফল। এসব ফল এখন ধনীদের খাবার হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের বাজারে বিদেশি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, আঙ্গুর, মাল্টা, খেজুর, নাশপাতি, আলুবোখারা আমদানি হয়। এসব ফল বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিসর, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসে। তবে আগে যে পরিমাণ ফল আসতো, এখন মৌসুম না হওয়ায় পরিমাণ একটু কমেছে।
এক মাসের ব্যবধানে চীনের আপেল ৮০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, দক্ষিণ আফ্রিকার আপেল ৫০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার আপেল ৮০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা, দক্ষিণ আফ্রিকার কমলা ১০০ টাকা বেড়ে ৩৬০ টাকা, ভারত ও মিসরের ডালিম ১৫০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাল্টা ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চীন ও ভারতীয় কালো আঙুর ৫০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা, মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, মানভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নাশপাতি ৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকা, আলুবোখারা (শুকনা) ৫০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো তাদের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে যায়। আসল কথা হলো স্বৈরাচারি আমলে ব্যবসায়ীদের চরিত্র যেমন ছিল এখনও তাতে কো পরিবর্তন ঘটেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্টদের এবিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি বলে মনে করেন দেশের মানুষ।