নিজস্ব প্রতিবেদক
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার একটি ব্রিক ফিল্ড দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদের দোসর আনছারুল হকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। এরইমধ্যে সন্ত্রাসীরা ব্রিক ফিল্ড থেকে তিন দফায় কোটি টাকার ইট ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় ব্রিক ফিল্ড অফিস কক্ষ থেকে আনছারকে আটক করে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
লুটপাটের নেতৃত্বে দেওয়া আনছারুল হক (৪৭) সাতকানিয়া উপজেলা এওচিয়া ইউনিয়নের মৃত নাছির আহমদের ছেলে। আনছারুল এওচিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। গত ৫ আগস্টের পর রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে আনছারুল আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেমে থাকেনি। উল্লেখ্য, আনছারুল হক একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফ্যাসিবাদের দোসর আবু ছালেহ’র ভাগ্নি জামাই।
জানা যায়, সাতকানিয়া এলাকার এসএমবি ব্রিক ফিল্ডের ওপর সাতকানিয়া সহকারি জজ আদালত ও চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তা অমান্য করে ফ্যাসিবাদের দোসর আনছারুল হকের নেতৃত্বে ২০-৩০ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গত রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে ব্রিক ফিল্ড থেকে ১০-১২ ট্রাক ইট বের করে নেয়। খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার ও এএসপি’র নির্দেশে সাতকানিয়া থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে একটি ফোর্স ব্রিক ফিল্ড পরিদর্শনে গিয়ে ঘটনাস্থলে ৪টি ইটবোঝাই ট্রাক দেখতে পায়। এসময় আনছারুল হক পুলিশদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। বিষয়টি সাতকানিয়া থানার ওসিকে জানালে তিনি ফোর্স নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আনছারকে আটক করে। এর আগে তার সহযোগী সামশুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিনসহ অন্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে সাতকানিয়া থানা পুলিশ আটক করলেও রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সেখানে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। যার মামলা নং- ডি আর-১৬/২০১৪.
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাত ৪টার দিকে প্রায় ১৫-২০টি ডেম্পার ট্রাক নিয়ে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মতো ইট লুট করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২২ লাখ টাকা। একইভাবে এই সন্ত্রাসী তার দোসরদের নিয়ে গত জুলাই মাসে সেখান থেকে ৩০ লাখ টাকার ইট ও ৩টি মেশিনসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিবাদের দোসর ও তাদের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। নগরীর চাঁন্দগাও ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের তালিকায় আনছারুল হকের নাম রয়েছে। আর ভুক্তভোগীর দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যা বর্তমানে তদন্তধীন আছে। এছাড়া ২০২১ সালে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়।
ভুক্তভোগী হাসান কামাল বলেন, আনছারুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার এসএমবি ব্রিক ফিল্ড দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই সন্ত্রাসীরা তিন দফায় ব্রিক ফিল্ড থেকে কোটি টাকার ইট ও মালামাল লুটপাট করেছে। সর্বশেষ লুটপাটের সময় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় সন্ত্রাসী আনছারকে ব্রিফ ফিল্ড অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে। আমি প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট উপদেষ্টার কাছে আমাদের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য দাবি জানায়।
সাতকানিয়া থানার এসআই বেলাল বলেন, এই ব্রিক ফিল্ডের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আনছারের নেতৃত্বে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার খবরে তদন্তে গেলে তার ব্রিক ফিল্ডে কেন পুলিশ ঢুকছে সেটি নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় ওয়ারেন্ট আছে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।