সাতকানিয়া প্রতিনিধি
সাতকানিয়ার ছনখোলা চূড়ামণি এলাকার পাহাড়ি টিলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অমূল্য অংশ। আজ তা যেন কাটাছেঁড়ার কবলে পড়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একসময় সবুজে ছেয়ে থাকা এই পাহাড়ি টিলাগুলোর পেট চিরে মাটি চুরি চলছে দিনের আলোর মতো। এই অবৈধ কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে একটি সুপরিকল্পিত সিন্ডিকেট। তারা পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে মাটি পরিবহন পর্যন্ত পুরো চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। পাহাড় কাটার সরঞ্জাম, শ্রমিক ও ট্রাকের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে চালানো হচ্ছে। ছনখোলা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহের অভিযোগে গতকাল শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দুই ইটভাটার ম্যানেজারকে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, ছনখোলার পাহাড়ি টিলার মাটি অবৈধভাবে কেটে ‘এইচএবি’ ও ‘এমবিএফ’ ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম, যা পরিবেশ ও কৃষিজমির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছনখোলা চূড়ামণি এলাকায় পাহাড় কাটা ও মাটি পরিবহনের চিহ্ন স্পষ্ট। পাহাড়ের পেটে বড় বড় গর্ত, পাশ দিয়ে চলছে মাটিভর্তি ট্রাকের আনাগোনা। স্থানীয়দের মুখে একটাই অভিযোগ, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর নয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম। সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র রসায়নবিদ জান্নাতুল ফেরদৌস, স্থানীয় থানা পুলিশের সদস্য ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
‘এইচএবি ব্রিকস’ ও ‘এমবিএফ ব্রিকস’ ইটভাটার মালিকানা ও ব্যবসার কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা জল্পনা রয়েছে। দুই ইটভাটার ম্যানেজার রাবেত ইসলাম ও মানিক দেবনাথ অভিযানের সময় অভিযুক্ত হন। তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও ভূমি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে, তাদের কাছে বৈধ অনুমতি নেই। পাহাড় কাটা শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটি স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রাকেও বিপর্যস্ত করছে। মাটি ক্ষয় ও পাহাড় ধ্বংসের ফলে সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে, যা ফসলের উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই ওই এলাকায় অবৈধ পাহাড় কাটার খবর পাচ্ছিলাম। নানা পর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে শনিবার অভিযান পরিচালনা করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, রাতে পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়। দুই ইটভাটার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।’