সাগরে জলদস্যু আতঙ্কে জেলেরা

2

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি

দেশের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির লোক অর্থের লোভে সাগরে জলদস্যুতার কাজে নেমে পড়েছে। দেশের বঙ্গোপসাগরের উপক‚লীয় ১৯ জেলা জুড়ে সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত অসংখ্য জেলে। জীবন-জীবিকার তাগিদে জেলেরা নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবহাওয়া প্রতিক‚ল ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে থাকলে জেলেরা মাছ ধরতে নেমে পড়েন বঙ্গোপসাগরে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ করে দেশে আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন এসব জেলেরা। তবে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ত্রধারী জলদস্যুরা সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে হামলা চালিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণে সর্বক্ষণই আতঙ্কে থাকছেন সাগরে যাওয়া জেলেরা।
ইলিশ প্রজনন হিসেবে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মোট ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। নির্দিষ্ট সময় পর সরকারি নির্দেশনায় জেলেরা কোটি টাকার পুঁজি নিয়ে ট্রলারসহ সাগরে মাছ ধরতে যায়। আহরিত মাছ যদি জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে লুট করে নিয়ে যায় তখন তাদের আর করার কিছু থাকে না। ধার-দেনা করা সেই পুঁজি হারানো ছাড়াও জীবন-জীবিকা নিয়েও অথৈ সাগরে পড়েন।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া একাধিক ফিশিং ট্রলারের মাঝি ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে যারা তাদের অনেকেই পুনরায় জলদস্যুতার কাজে নেমে পড়েছে। তাদের সাথে নতুন করে যোগ দিয়েছে কিছু তরুণ-যুবক। ইতোমধ্যে থানা থেকে ও মালিকানা যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে সেসব অস্ত্রগুলো দস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
উপক‚লের ফিশিং ট্রলার মালিক আব্বাস জানান, সাগরে জলদস্যু নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক এবং আত্মসমর্পণ করে অনেক জলদস্যু দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে- তারমধ্যের কিছু সংখ্যক জলদস্যু আবারও আগের পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা ইলিশ ধরে উপক‚লে ফিরে আসার পথে হামলা করে আহরণকৃত মাছ, জাল, ডিজেল, মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ইলিশের ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও অনেক জেলে ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না। তিনি জানান, ফিশিং ট্রলারগুলো একবার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় ১৫-২০ লাখ টাকার (খাবার, বরফ, বিভিন্ন সরঞ্জাম) প্রয়োজন হয়। একবার জলদস্যুদের কবলে পড়লে দ্বিতীয়বার সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার অর্থ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রলার মালিককে।
জেলেদের মতে, সাগরে জলদস্যুতা নির্মূল করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করতে হবে।
এদিকে, সুন্দরবন, কুয়াকাটা বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, ল²ীপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী, স›দ্বীপ, আনোয়ারা, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, পেকুয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ উপক‚লের চিহ্নিত জলদস্যুরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে একাধিক ট্রলার নিয়ে নির্বিচারে সাগরে জলদস্যুতার কাজে নেমে পড়েছে। এসব অপরাধ দমনে দেশে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো দরকার বলে সচেতনমহল অভিমত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি সাগরে টহল জোরদার করারও দাবি তাদের।