তিন ম্যাচে একেবারে পয়েন্টশূণ্য টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব। চট্টগ্রাম আবাহনী ২ ম্যাচে এবং লাওসের ইয়ং এলিফ্যান্ট তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের পথে আগেই পা এগিয়ে বসে ছিল। তবে গ্রুপ ‘এ’ থেকে কোন্ দু’দল সেমিফাইনালে যাচ্ছে তার নিষ্পত্তি হবে আবাহনী ও মোহনবাগান এর মধ্যকার গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে। কেননা এ ম্যাচে হারলে বা ড্র করলে মোহন বাগানের বিদায় ঘণ্টা বাজবে, সেমির টিকিট পাবে আবাহনী-ইয়ং। কিন্তু মোহনবাগান কোন মতে জিতলেই গোল গড়ে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে আবাহনী ও কলকাতার দাদারা। সেটাই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা হেরেছে ০-১ গোলে। ফলে গ্রুপ ‘এ’তে চট্টগ্রাম আবাহনী, মোহনবাগান ও ইয়ং এলিফ্যান্ট তিন ম্যাচ থেকে সমান ৬ পয়েন্ট করে পেলেও নেট গোলের সুবাদে আবাহনী (৮/৪) ও মোহনাগান (৪/২) শেষ চারের টিকিট পায়, কপাল পোড়ে ইয়ং এলিফ্যান্টস’র (৬/৬)।
শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তারমধ্যে ছিল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগানের বিপক্ষে স্বাগতিক দল চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের ম্যাচ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ৩০ হাজার দর্শক ক্ষমতাসম্পন্ন এমএ আজিজ স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরে গেলো। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে সমর্থকদের।
আগের দুই ম্যাচে জয় পাওয়ায় সেমিফাইনালে যেতে হলে শিরোপা পুনরুদ্ধারে নামা চট্টগ্রাম আবাহনীর ড্র হলেও চলতো মোহনবাগানের বিপক্ষে। তবে হারলেও ভয় ছিল না তাদের। কারণ গোল ব্যবধানে বেশ এগিয়ে ছিল তারা। এমন সহজ সমীকরণের ম্যাচে সেমিফাইনাল আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আগের দুই ম্যাচের একাদশ থেকে সেরা ছয় খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়দের দিয়ে মোহনবাগানের বিপক্ষে একাদশ সাজান কোচ মারুফুল হক। কমপক্ষে ছয় গোল না খেলে ছিটকে যাওয়ার ভয় না থাকায় বিশ্রাম দিয়েছিলেন আগের দুই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, মিডফিল্ডার ম্যাথিউ চিনেডু, আরিফুল ইসলাম, গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল, মনির আলম ও রহমত মিয়াকে।
মোহনবাগানের বিপক্ষে বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল পরিবর্তিত একাদশ দিয়ে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি আবাহনী। বলের নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ সময় ছিল মোহনবাগানের দখলে। তবে স্বাগতিকদের ভাগ্য ভালো, এ সময়টায় গোল আদায় করতে পারেনি মোহনবাগান।
অগোছালো আক্রমণে একটু-আধটু সুযোগ তৈরি হলেও চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড লুকা রতকোভিচ ক্রসবারের ওপর দিয়ে ও পোস্টের বাইরে মেরে নষ্ট করেন।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে পিটারের দারুণ সেভে বেঁচে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা সুহাইরকে আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন হীমেল। গোলরক্ষককে কাটিয়ে সুহাইরের বাড়ানো ক্রস গোললাইন থেকে হেডে ফেরান পিটার।
৫৪তম মিনিটে জোসেবা বেইতার কর্নারে ড্যানিয়েল সাইরাসের হেড ফিরিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ত্রাতা হীমেল। ৬০তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নরা। সার্বিয়ান ডিফেন্ডার পিটারের প্রতিরোধ ভেঙে কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সুহাইর।
গোল হজমের পর সাকের ও রাব্বীকে তুলে দলের প্রাণভোমরা জামাল ও ম্যাথিউকে নামান কোচ। চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলায়ও গতি বাড়ে। খেলায় গুছিয়ে তোলে বন্দর নগরীর দলটি। কিন্তু বারবার তাদের হতাশ হতে হয়েছে ফিনিশারের অভাবে। ৭৫ ও ৮০তম মিনিটে দুইটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মারুফের শিষ্যরা। শেষদিকে আরও বেশ কয়েকবার আক্রমণে ওঠেন জামালরা। কিন্তু মোহনবাগানের রক্ষণ দেয়াল ভাঙতে পারেননি তারা।
শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের প্রথম হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বন্দর নগরীর ক্লাব আবাহনী। তবে স্বাগতিক দলের সেরা একাদশ সাজানো এবং দলের খেলা ও ফলাফল নিয়ে ফুটবল পাগল দর্শকরা বিরূপ মন্তব্য ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চন্দনপুরার সাবেক কৃতি ফুটবলার ওসমান গনি লিটন ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রিয় দল আবাহনীর এ হার মেনে নেয়া যায় না। কারণ দল সাজানো এবং খেলোয়াড়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে কখনো মনে হয়নি আবাহনী জেতার জন্য নেমেছে। গ্যালারির কিছু দর্শক ‘ভাই খেলা’ বলে গালিগালাজ করতেও শোনা গেছে।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মোহনবাগানের ফ্রান্সিসকো জেভিয়ার। তাকে পুরস্কার তুলে দেন। চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড এর সভাপতি এম এ লতিফ এমপি, এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান রাশেদুর রহমান শাহীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ গোলাম ফ্রাুক, সিজেকেএস সহসভাপতি মো. হাফিজুর রহমান ও ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।