ঢাকা প্রতিনিধি
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতির পদে হঠাৎ করে শূন্যতা তৈরি হলে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বিলম্বিত হবে বলে মনে করছে দলটি। গতকাল বুধবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয়, বাধাগ্রস্ত হয় বা কন্টকাকীর্ণ হয়, তা জাতির কাম্য নয়। সুতরাং পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা যাতে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র, বা এখানে অন্যকিছুর পাঁয়তারা না করতে পারে, সে জন্য আমরা সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ নিজের কাছে নেই বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর থেকে তার অপসারণ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে। বিএনপি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ চায় কি না জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে, যেটা জাতির কাম্য নয়।রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে দেশে ‘নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট’ যেন সৃষ্টি না হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠার মধ্যেই গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠক শেষে বেলা ১২টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপির তিন নেতা। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্পেসিফিক কোনো ব্যাপার না। আমরা বলেছি দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করব।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে আসছেন, তারই ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক।
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য যে সংস্কার চলছে সে কাজ জোরদার করার জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেইসব সংস্কার দ্রæত করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আলোচনা আমরা করছি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ যে কষ্ট পাচ্ছে, তা দূর করার ব্যাপারে সরকারকে ‘আরো কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা’ পালনের পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে, নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তনের সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা দরকার।
এখানে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি পেশার সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন, সবার দৃঢ়তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। যাতে কেউ কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে না পারে, এভাবে সবাইকে হুশিয়ার থাকতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দ্রæত শেষ করা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই সংস্কারগুলো করার দাবি তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের চলমান সংকটগুলো নিরসন করার, আন্দোলনের ‘মূল আকাক্সক্ষা’ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন। আমরা বলেছি, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট করার চেষ্টা করে, তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব।
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়টি নিয়ে আড়াই মাস পর বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়।
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন, কিন্তু কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। ওই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।