করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম। কারণ এখানে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর আছে তাই এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হলেও সমুদ্রবন্দরে হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া এখনও চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার কোনো কিটসও নেই, যা নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে আসেনি। আর কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বিকল্প সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গতকাল সোমবার বিকালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার সার্বিক প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আটজন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২৯ জন ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ আছেন। সরকার দেশে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশফেরত যে কোনো ব্যক্তিকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
হোম কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন তারা ঠিকমত নির্দেশনা মানতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি জনগণকেও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থা করব। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যা কিছু আছে শেষবিন্দু দিয়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কতটুকু আছে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখার সময় চিকিৎসক শুধু গ্লাভস ও মাস্ক পরলেই হবে। শুধু আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যেতেই ওই পোশাক (এপ্রোন সদৃশ) পড়তে হবে। আউটডোরে রোগী দেখতে ওই রকম পোশাক পরবেন না। সরঞ্জাম আমাদের পর্যাপ্ত আছে। আমরা একটা চেইন তৈরি করতে পেরেছি। কিছুদিন পরপর সরঞ্জাম পাব। তবে সঙ্কট হবে না। এছাড়া যদি সেই বিশেষ এপ্রোন না থাকে, তাহলে দুটো সাধারণ এপ্রোন একসাথে অথবা রেইনকোটও ব্যবহার করা যাবে। কারও কাছে মাস্ক না থাকলে তিন লেয়ারের কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। হাতে নরমাল গ্লাভস পড়লেই চলবে।
চট্টগ্রামে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের শনাক্তের কিটস আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলে রাব্বি বলেন, কোনো ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণ দেখে করোনা আকান্ত মনে হলে আইইডিসিআর থেকে লোক এসে স্যাম্পল নিয়ে যাবেন ঢাকায়। সেখানে পরীক্ষার তিন ঘণ্টা পরই ফল জানা যাবে। এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে কিট বাইরে চলে এলে সেগুলো নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। যেমনটা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এছাড়া নীতিগত সিদ্ধান্ত হলে কিট ঢাকার বাইরে যাবে। তাহলে চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি এবং কক্সবাজারের বিষয়টি আলোচনায় আছে। এখানে আগে আসবে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অবশ্যই কিট ঢাকার বাইরে আসবে।
সিভিল সার্জন বলেন, চট্টগ্রামে ইতালি ফেরত যাত্রী বেশি। সেখান থেকে কেউ এলে বিমানবন্দর থেকেই আমাদের তালিকা দেওয়া হয় দ্রুত। সেটা স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ডিজিএফআইও মনিটর করছে।
সবাইকে সচেতন হতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত প্রবাসী ব্যক্তিদের একটি ঘরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে প্রতিবেশীরা তাদের শত্রূ ভাববেন না। উনারা বৈশ্বিক একটা পরিস্থিতির শিকার। তারা অনেক কষ্ট করে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে গেছেন। তাদের রেমিটেন্সে দেশের অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।