নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিবেশী দেশ ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে করে চীনের সাথে সম্পর্কেও নতুন মাত্রার পাশাপাশি বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহের বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের নতুন দ্বার খুলবে। সেইসঙ্গে খুলবে বাণিজ্যের নতুন দুয়ার। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দরের কার্গো সার্ভিসকে চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতায় প্রস্তুত করছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দুই বছর পর এই বিমানবন্দরে পুনরায় কার্গো সার্ভিস চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ভারতের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার সঙ্কটকে বাংলাদেশের তরফে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের একটি নতুন দুয়ার উন্মোচিত করার সুযোগ হিসেবে দেখছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। এরপর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে আমদানি-রপ্তানির কার্গো পরিবহনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে বেবিচক চেয়ারম্যানের দিকনির্দেশনায় গত সপ্তাহে শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি সভা হয়। সভায় কার্গো পরিবহন অপারেশন সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
তিনি বলেন, সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা, বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যকার সমন্বয় ঘাটতি নিরসন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ ও অন্যান্য দেশে কার্গোর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির শর্তগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় কাস্টমস, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ অন্যান্য অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কার্গো টার্মিনালের নানা প্রতিবন্ধকতা নিরসনসহ কার্গো পরিবহনের বিভিন্ন শর্ত পূরণে সভায় উপস্থিত সবার সর্বসম্মতিতে তিন ধাপে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত সভায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেছেন, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য ভিন্নভাবে ইতিবাচক। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান আমাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইউরোপসহ কাঙ্খিত গন্তব্যে কার্গো পরিবহন চালুর সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের মধ্য দিয়ে চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে উল্লেখ করেছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তা আবু বক্কর। তিনি বলেন, ২০২২ সালে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে এমিরেটস এয়ারলাইনস চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে চার দিন কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করতো। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ সপ্তাহে একদিন কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করতো। নানামুখী ষড়যন্ত্রে এসব কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু করা যায়নি। চট্টগ্রামে পাঁচটি ইপিজেডসহ একাধিক উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সংকট হবে না। নতুন করে কার্গো ফ্লাইট চালুর বিষয়টি আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। বিমানবন্দর এলাকায় প্রচুর জমি খালি পড়ে আছে। এসব জমি ব্যবহারের পাশাপাশি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করলে চট্টগ্রাম থেকে কার্গো সার্ভিস বাড়বে।
চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে চীনের সঙ্গে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো খবর। এই উদ্যোগের ফলে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বালিজ্যের প্রসার ঘটবে। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ধাক্কা সামলাতে আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন তথা বাণিজ্যিক কার্গো ফ্লাইট চালু অতি জরুরি। এ ছাড়া আমাদের বেশিরভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে সমুদ্রপথে। কার্গো সার্ভিস শুধু চীনের সঙ্গে নয়: নেপাল ও দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্ত করা গেলে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে চীনের কুনমিং রাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের একটি নতুন দ্বার খুলবে। বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রাম-কুনমিংয়ে সরাসরি ফ্লাইট চালুর অনুমোদন দিয়েছে। এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। উভয়পক্ষ মিলে আমরা এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজকে আরও বেগবান করবো।