নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের ১১৬ বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জব্বারের বলীখেলা ও ১৯ বছরের ঐতিহ্য সাম্পান বাইচ। এ ঐতিহ্য দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজনে যুক্ত হচ্ছে সরকার। একই সাথে দুই ঐতিহ্য ন্যাশনাল ক্যালেন্ডারের সাথেও যুক্ত হবে।
গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হবে জব্বারের বলীখেলা। এছাড়া চট্টগ্রামের আরেক ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকাবাইচ আয়োজনেও যুক্ত থাকবে এই মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, ‘সাম্পান চট্টগ্রামের হার্ট। নিউইয়র্ক শহর যেমন কল্পনা করা যায় না হলুদ ট্যাক্সি ছাড়া তেমনি চট্টগ্রাম কল্পনা করা যায় না সাম্পান ছাড়া। তাই এবার আসার পেছনে প্রথমে এসব উৎসবের তালিকা করার জন্য কাজ দিয়েছি আপাতত শিল্পকলা একাডেমিকে। যা ন্যাশনাল হেরিটেজ হিসেবে স্থান পাবে। তারা তালিকাটা করছে। এই তালিকা হওয়ার পরে এগুলো আমাদের ক্যালেন্ডারের মধ্যে ঢুকবে। ঢাকা থেকে আমরা এই কাজগুলোকে ফ্যাসিলেটেইড করার চেষ্টা করবো।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি যেন পুরো বাংলাদেশের হয়ে ওঠে। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর যেন না হয়। এই কাজগুলো কিছু কিছু করছি। আমরাতো স্বল্প দিনের সরকার। আগামীতে যারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তারা নিশ্চয় এগুলো কন্টিনিউ করবে, এটি আমার স্থির বিশ্বাস। কারণ ভালো কাজ কেউ ফেলে দেয় না। বিশেষ করে উৎসব নিয়ে আমরা কাজ করছি। যা একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সাম্পান ও বলীখেলা শুধু চট্টগ্রামে হবে তা নয়, এগুলো সারাদেশে হবে।’
এ সময় উপদেষ্টা মোস্তফা ফারুকী জব্বারের বলীখেলা পরিচালনা কমিটির আহব্বায়ক মো. হাফিজুর রহমান ও সাম্পান বাইচ পরিচালনা কমিটির একজন আয়োজক আলীউর রহমানের কথা শুনেন। কীভাবে এসব ঐতিহ্যকে ধরে রাখা যায় এবং কী করা যায় সে বিষয়ে তিনি তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চান।
চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে পরিকল্পনা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর আমরা পরিদর্শন করেছি। এটা গত ১৫-১৬ বছর প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। মাস তিনেক আগে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করেছি এটা নিয়ে। সেই মিটিংয়ে প্রথম কাজটা আমরা করেছি যে, এটার যে বরাদ্দ ছিল সেটা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এবার এখানে এসে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের পর আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, শুধু বরাদ্দ বাড়ানোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা। সেটা করার জন্য দরকার হচ্ছে প্রপার কিউরেটর, যারা বিষয়গুলো জানবেন এবং এটা শুধু চট্টগ্রামের বিষয় নয়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু করে উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী সিগনিফিকেন্ট কাজ করেছেন, সবগুলো জিনিস যেন আসে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি খাতের কিছু সমস্যা তুলে ধরে উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমাদের সকল আগ্রহ, শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় না, সকল মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ, মানে আমাদের উন্নয়নের দর্শনই হচ্ছে- দালান বানাও, দালান বানাও, দালান বানাও। দালানের ভেতরে কী হবে, এটার কোনো খবর নেই। শিল্পকলা একাডেমি দেশের বহু জায়গায় ৬০০-৭০০ সিটের অডিটোরিয়াম বানিয়েছে, যেখানে ৫০ জন লোকও যায় না, মাসে পাঁচ-ছয়বারও ব্যবহার হয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে পাওয়ারফুল হচ্ছে গান। একেক অঞ্চলে একেক রকম গান। এই গানই শক্তি। অথচ আমরা এগুলোকে নিয়ে কখনও কাজ করিনি। বাইরেও এগুলোকে প্রমোট করিনি। আমাদের দেশের শিল্পকলা পুরোনো রীতিমালায় চলে। শিল্পকলা কখনও দেশিয় গান নিয়ে ভাবেনি। চট্টগ্রামে মোস্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড গান। এটাতে সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানদের। কিন্তু চট্টগ্রামের শিল্পকলার সঙ্গে রক মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানরা শিল্পকলাকে তার আখড়া ভাবতে পারল না, এটা শিল্পকলার ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা।’
সরকারি মেয়াদ শেষে যাওয়ার আগে ‘নোট টু সাকসেস’ নামে একটি দিকনির্দেশনামূলক নোট তৈরি করবেন বলেও জানান ফারুকী। তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ কিংবা ১০ বছরে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কী কী করা উচিত, তা নিয়ে একটি ব্লু-প্রিন্ট করছি। আমার উত্তরসূরির জন্য আমি এটি রেখে যাবো। তিনি চাইলে সেখান থেকে গ্রহণ করতে পারেন।’
এর আগে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম ইনস্টিটিউট, জাতিতাত্তি¡ক জাদুঘর ও জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।